পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুই ভগিনী
৭৩

 অমুনার দুঃখের সীমা নাই। কাল রাজরাণী ছিলেন, আজ পথের ভিকিরি। তিনি ভাবলেন, এখন যাই কোথা। বাপের বাড়ী ঠাঁই নাই। এমন যে রাজরাজেশ্বর সােয়ামী, তিনিও আমায় ত্যাগ করলেন! হায়, এ দুঃখের কথা কার কাছে বলি। যমুনা এক মায়ের পেটের বােন্, অনেক দিন তার সঙ্গে দেখা নাই। তাকে একবার না দেখে কোথাও যাব না। এই ভেবে তিনি তাঁর ছেলেটীকে কোলে ক’রে কাঙালীর বেশে মন্ত্রীর বাড়ীর দিকে চল্লেন। অন্দরের দরজায় গিয়ে তাঁর বুক দুর দুর করতে লাগলাে। খিড়কির পুকুর পাড়ে বসে ভাবতে লাগলেন, ভগিনী কি আমায় এ বেশে চিনতে পারবে। তখন দেখলেন যমুনার দাসী তাঁর স্নানের জল নিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজের হাতের আংটি লুকিয়ে কলসীর ভিতর ফেলে দিলেন।

 যমুনা ঘরে বসে গান কোরছিলেন। জল ঢালতেই অমুনার আংটি তাঁর গায়ে পড়লাে। তিনি দাসীকে বােকে উঠলেন, ঝি, বল্ দেখি তাের কি আক্কেল, তুই “তুক” করেছিস্ না কি? স্নানের জলের ভেতর আংটি দিলি কেন? দাসী ভয়ে জড়সড় হয়ে বল্লে, ঠাকরুণ আমি তাে কিছুই জানি না। তবে পুকুর পাড়ে একটী মেয়ে ও একটী ছােট ছেলে বসে রয়েছে এই জানি। মেয়েটী দেখতে তােমারই মতন সুন্দর, গরীব অথচ দামী গহনা পরা; আমার সন্দেহ হয় এ তারই কাজ। যমুনা আংটী তুলে দেখলেন ও দিদিকে চিনতে পারলেন। অমনি ছুটে গিয়ে তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে পরম সমাদরে ঘরে নিয়ে এলেন।

 অনেক দিন পরে দুই ভগিনীর পরস্পর দেখা। চো’কের জল মুছিতে মুছিতে কত সুখ দুঃখের কথা তারা বলিতে লাগি