পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুই ভগিনী
৭৯

আমার দেবীর দেহের রক্তপাত হলাে; সেই খানে আমার নিজ শরীরের রক্তপাত ক’রে পৃথিবী হইতে বিদায় নিই। রাজার সময়ে নাওয়া নাই, সময়ে খাওয়া নাই, মুখে কেবল “রাণী অমুনা”।

 রাজা রাণীর শােকে ক্রমে পাগল হয়ে উঠলেন। এখন তাঁর জ্ঞান নাই। একদিন মন্ত্রীকে বল্লেন, মন্ত্রী, যত টাকা লাগে দেবো; স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল যেখান থেকে পার আমার রাণীকে খুঁজে এনে দাও। নইলে ঠিক জেনাে, তােমার গর্দ্দানা নেবাে। যাও, দু’দিন সময় দিলুম।

 বাড়ী এসে মন্ত্রী বল্লেন, গিন্নি তুমিই আমার ধড়ে মুণ্ড রাখলে। চাকরি তাে দুরের কথা, এবার প্রাণ নিয়ে টানাটানি হয়েছিল। দাও, রাণীকে শীঘ্র আমার সঙ্গে পাঠিয়ে দাও। এই বলে তিনি রাজার নূতন হুকুমের কথা সব খুলে বল্লেন। তা শুনে যমুনা বলেন, আমি সব আগেই জানি। তােমার অত তাড়াতাড়ি কেন, অন্ততঃ দুটা দিন যাক। তারপর স্বামীর সাহস পরীক্ষা করবার জন্য তিনি বল্লেন, কা’ল তুমি রাজ দরবারে গিয়ে রাজাকে দেখে প্রণাম করাে না। মন্ত্রী বল্লেন, সে কি কথা! আমার ঘাড়ে একটা বই দশটী মাথা নয়। তিনি হচ্ছেন রাজা, তাঁকে দেখে প্রণাম না জানালে কি আর রক্ষে আছে? যমুনা হেঁসে বল্লেন, তুমিই তাে সে দিন গরব ক’রে বোলছিলে “আমি রাজাকে ভয় করি না, তিনি পাগল হয়েছেন”। মন্ত্রী লজ্জিত হ’লেন। যমুনা তখন তাঁকে সাহস দিয়ে কি কি করতে হবে সে বিষয়ে অনেক উপদেশ দিলেন।

 পরদিন রাজার সঙ্গে তার দেখা হলো। চক্ষু লজ্জার ভয়ে মন্ত্রী একটু মুখ ফিরিয়ে প্রণাম করলেন। রাজা কুপিত হলেন।