পাতা:মেয়েলি ব্রত ও কথা - পরমেশপ্রসন্ন রায় (১৯০৮).pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
ইতু-রা’ল

রেগে কথা কইতে পারেন না। তখন মন্ত্রী বল্লেন, রাজা তুমি নিশ্চয়ই পাগল হয়েছ; নইলে যে রাণীকে স্বয়ং হুকুম দিয়ে কেটে ফেলেছ তাকে খুঁজে দেবার জন্য হুকুম দেবে কেন? আমার গর্দ্দানাটা তো গিয়েই রয়েছে তবে আর তোমাকে প্রণাম বা কেন, ভক্তিই বা কেন? তোমাকে আর আমি ভয় করি না। শুনে রাজা নরম হয়ে গেলেন। মন্ত্রী আবার বলতে লাগলেন, রাজা, তোমার প্রতি ইতু-রা’ল ঠাকুরের কোপ। তাঁর ক্রোধের শান্তি না হ’লে স্বর্গ, মর্ত, পাতাল খুঁজলেও রাণীকে আর পাওয়া যাবে না। যদি ভাল চাও, তবে আমার ঘরে চল। আমার স্ত্রী আজ ইতু-রা’ল ঠাকুরের ব্রত করবে; ঠাকুরের কৃপা হলে রাণীকে ও ছেলেকে পেলেও পেতে পার।

 রাজা তাই করলেন। তিনি মন্ত্রীর বাড়ী গেলেন। অমুনা ও যমুনা ভক্তি ক’রে ব্রত সমাপন করলেন। তারপর যমুনা, অমুনাকে ও তাঁর ছেলেকে সাজিয়ে গুজিয়ে আড়ালে রাখলেন। তখন মন্ত্রী রাজাকে অন্দরে ডেকে এনে বল্লেন, ব্রত হয়ে গেছে। তুমি ভুঁয়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম কর। রাজা সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। চোখ বুজে মনে মনে প্রার্থনা করলেন, ঠাকুর আমার শত অপরাধ মার্জ্জনা কর। রাণীকে ও পুত্রকে বিনাদোষে প্রাণদণ্ড করেছি, তোমার চরণে এই ভিক্ষা তাঁদের সঙ্গে আমায় মিলিত কর। পৃথিবীতে আমার অন্য সাধ নাই। এই বলিয়া রাজা মাটীতে মাথা লুটাইয়া গাত্রোখান করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেলিয়া দেখতে পেলেন, রাণী ও তাঁর পুত্র ঠিক সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন। রাজা আনন্দে আত্মহারা হয়ে তাঁদের জড়িয়ে ধরলেন।