পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মলুয়া
৭৫

তোমার রূপ দেখ্যা কাজী হইয়াছে ফানা[]
অঙ্গ ভরিয়া তোমায় দিব কাঞ্চা সোনা॥
নিখা যদি কর তারে ভাল মত চাইয়া[]
তার ঘরের যত নারী রইব বান্দি হইয়া॥
সোনা দিয়া বেইরা দিব সর্ব্বাঙ্গ শরীর।
সাতখুন মাপ তোমার বিচারে কাজীর॥
সোনার পালঙ্ক দিব সাজুয়া বিছান।
গলায় গাথিয়া দিব মোহরের থান॥
দিব যে কাঁকের কলসী সোনাতে বান্ধিয়া।
নাকের বেসর দিব হীরায় গড়িয়া॥”

ভয় পাইয়া কন্যা কাঁকের কলসী ভরে।
একবারে চলে কন্যা আপনার ঘরে॥
মনের কথা জান্তে না দেয় পাছে পাছে যায়।
শাশুড়ী ঘরেতে নাই না দেখে উপায়॥

আর বার কথার ফাঁদ ফাদিল কুট্টুনি।
রোষিয়া কহিল মলুয়া, “শুনলো কুট্টুনি॥
স্বামী মোর ঘরে নাই কি বলিবাম তরে।
থাকিলে মারিতাম ঝাটা তর পাক্‌না[] শিরে।
বয়স গিয়াছে তর মরবি আজিকালি।
লোকের দুষমন তুই দুই চক্ষের বালি॥
কুল বেচ্যা খাইছ তুমি বয়সের কালে।
সেই মত দেখ বুঝি নাগরিয়া[] সকলে॥
কাজীরে কহিও কথা নাহি চাই[] আমি।
রাজার দোসর[] সেই আমার সোয়ামী॥
আমার সোয়ামী সে যে পর্ব্বতের চূড়া।
আমার সোয়ামী যেমন রণ-দৌড়ের ঘোড়া[]

  1. ফানা=পাগল।
  2. চাইয়া=বিবেচনা করিয়া।
  3. পাক্‌না=পক্বকেশযুক্ত।
  4. নাগরিয়া=নগরের স্ত্রীলোক।
  5. চাই=শুনিতে চাই।
  6. দোসর=তুল্য।
  7. রণ-দৌড়ের ঘোড়া=রণক্ষেত্রে যে ঘোড়া বিপক্ষকে দলন করিতে ছুটিরা যায়।