শিকারী কহিছে “মইষাল মোর কথা ধর।
এই কন্যা দেও মোরে লইয়া যাই ঘর॥
মণিমুক্তা দিব তোমায় ধামাতে মাপিয়া।
চৌদ্দ পুরা জমি দিব বাপেরে কহিয়া॥”
কান্দিয়া মইষাল কয় “মোর ধনে কাজ নাই।
মায়েরে ছাড়িলে আর মোর বাঁচা নাই॥
রাঙ্গাচরণ পাইয়াছি অল্পে না ছাড়িব।
ক্ষীরসর দিয়া আমি জন্ম ভরা পূজব॥
এক দণ্ড না দেখিলে সংসার অন্ধকার।
তিলেক ছাড়িলে মায়ে না বাঁচিব আর॥”
যত কথা কহে কুমার মইষাল না মানে।
কি যেন লাইগাছে দাগা মইষালের প্রাণে॥
অনেক হইল বুঝা-পড়া দিনের হইল শেষ।
কন্যারে লইয়া কুমার যাইব আজি দেশ॥
কান্দিয়া মইষাল কয় “শুন মোর মাও।
অন্তকালে দিও মোরে রাঙ্গা দুটি পাও॥
বড় দুঃখ পাইছ মাগো থাকি মোর ঘরে।
মনেতে রাখিও মাগো এই অভাগারে॥
ধনরত্ন না চাই আমি না চাই জমীবাড়ী।
অন্তকালে দিও মাগো তোমার চরণতরী॥”
মইষালের চক্ষের জলে উলা[১] বাথান ভাসা।
কন্যারে লইয়া কুমার গেল নিজ দেশে॥
( ১৩ )
প্রদীপকুমার ও কমলা
সন্ধ্যাকালেতে কন্যার ঘরের দীপ জ্বলে।
মারের কথা স্মরণ কইরা ভাসে চক্ষের জলে।
- ↑ উলা=উলাখড়ের বাথান (প্রান্তর)।