পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
১৷৷৴৹

তেমনই সংগ্রহ করিয়া পাঠাইয়াছিলেন। আমি সেগুলি যথাসাধ্য শৃঙ্খলার মধ্যে আনিয়াছি। এই তিন-চার বৎসর যাবৎ আমি এই গাথাগুলির অনুবাদ, টীকা ও টিপ্পনী লেখা ও ভূমিকা রচনা ছাড়া সংগ্রহসম্বন্ধে বিস্তর উপদেশ দিয়াছি এবং প্রতি পালাটি বিশেষ বিশেষ সর্গে বিভক্ত করিয়াছি। গান গাওয়ার সময়ে গায়কেরা যে বিরাম গ্রহণ করেন, লিখিত রচনায় সেরূপ বিরাম লওয়ার অবকাশ নাই, সুতরাং ঐভাবে বিভাগ না করিলে গাথাগুলির পয়ার নিতান্ত একঘেয়ে হইয়া যায়।

 প্রথম খণ্ডের প্রথম সংখ্যায় সুদীর্ঘ ইংরাজী ভূমিকা প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা পাঠকেরা পড়িয়া সমস্ত তত্ত্ব জানিতে পারিবেন, বাঙ্গালা ভূমিকায় সেই সকল কথা অতি সংক্ষেপে লিখিলাম, কিন্তু ইংরাজী ভূমিকায় যাহা নাই, এমন অনেক কথাও এই স্থানে লিপিবদ্ধ হইল। এই দুই ভূমিকা পড়িয়া পাঠক এই গাথাগুলি সম্বন্ধে সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় অবগত হইবেন। প্রথম সংখ্যায় মানচিত্র, ইংরাজী সাধারণ ভূমিকা, সংক্ষিপ্ত ইংরাজী অনুক্রমণিকা, ইংরাজী অনুবাদ ও ১১খানি ছবি প্রদত্ত হইয়াছে। এই (দ্বিতীয়) সংখ্যায় ভূমিকা ও টীকাসমেত মূল দেওয়া হইল। প্রথমখণ্ডে এই দুই সংখ্যায় মাত্র ১০টি গাথা দিলাম, যথা:—

১। মহুয়া
৩। চন্দ্রাবতী
৫। দেওয়ান ভাবনা
৭। রূপবতী
৯। কাজলরেখা

২। মলুয়া
৪। কমলা
৬। দস্যু কেনারাম
৮। কঙ্ক ও লীলা
১০। দেওয়ানা মদিনা

 ১। মহুয়া—নমশূদ্রের ব্রাহ্মণ দ্বিজ কানাই নামক কবি ৩০০ বৎসর পূর্ব্বে এই গান রচনা করেন। প্রবাদ এই, দ্বিজ কানাই নমশূদ্র-সমাজের অতিহীনকুল-জাতা এক সুন্দরীর প্রেমে মত্ত হইয়া বহু কষ্ট সহিয়াছিলেন, এজন্যই ‘নদের চাঁদ’ ও ‘মহুয়া’র কাহিনীতে তিনি এরূপ প্রাণঢালা সরলতা প্রদান করিতে পারিয়াছিলেন। নদের চাঁদ ও মহুয়ার গান একসময়ে পূর্ব্ব-মৈমনসিংহের ঘরে ঘরে গীত ও অভিনীত হইত। কিন্তু উত্তরকালে ব্রাহ্মণ্য-ধর্ম্মের কঠোর শাসনে এই গীতিবর্ণিত প্রেম দুর্নীতি বলিয়া প্রচারিত হয়, এবং হিন্দুরা এই গানের উৎসাহ দিতে বিরত হন। এখন বহুকষ্টে এই গীতিকাটির সমগ্র অংশ উদ্ধার করা হইয়াছে। গীতিকার প্রথম ১৬ ছত্রের স্তোত্র জনৈক মুসলমান গায়কের রচিত। গাতি-বর্ণিত ঘটনার স্থান নেত্রকোণার নিকটবর্তী। খালিয়াজুরি থানার নিকট—রহমপুর হইতে ১৫ মাইল উত্তরে “তরার হাওর” নামক বিস্তৃত ‘হাওর’—ইহারই পূর্ব্বে বামনকান্দি, বাইদার দীঘি, ঠাকুরবাড়ীর ভিটা, উলুয়াকান্দি, প্রভৃতি স্থান এখন জনমানবশূন্য হইয়া রাজকুমার

D—1983 B.T.