পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
১৷৷৶৹

“ধলাই বিল” আরালিয়া গ্রামের ৩০ মাইল উত্তরে। জাহাঙ্গীরপুর গ্রাম আরালিয়া হইতে ২৬ মাইল উত্তর-পশ্চিমে। সম্ভবতঃ ধনু নদীর শাখাপ্রশাখা বাহিয়া দেওয়ান জাহাঙ্গীর মলুয়ার সঙ্গে কুড়া শীকার করিতে “পদ্মোৎপলঝষাকুল” ধলাই বিলে আসিয়াছিলেন।

 ‘মলুয়া’ পালাটি চন্দ্রবাবু জাহাঙ্গীরপুরের উপকণ্ঠস্থিত ‘পদমশ্রী’ গ্রামের পাষাণী বেওয়া, রাজীবপুরের সেখ কাঞ্চা, মঙ্গলসিদ্ধির নিদান ফকির, খুরশীমলীর সাধু ধুপী, সাউদ পাড়ার জামালদিসেক, দুলাইল-নিবাসী মধুর রাজ এবং পদমশ্রীর দুখিয়া মালের নিকট হইতে সংগ্রহ করিয়াছিলেন। এই গাথার মোট ছত্রসংখ্যা ১২৪৭, আমি ইহাকে ১৯ অঙ্কে বিভাগ করিয়াছি। ১৯২১ খৃষ্টাব্দের ৩রা অক্টোবর এই গীতিকা আমার হস্তগত হয়।

 ৩। চন্দ্রাবতী—নয়ানচাঁদ ঘোষ প্রণীত। এই কবি রঘুসুত, দামোদর প্রভৃতি অপর অপর কয়েকজন কবির সহযোগে ‘কঙ্ক ও লীলা’ নামক আর-একটি গাথ। প্রণয়ন করেন। চন্দ্রাবতী সুবিখ্যাত মনসাভাসান-লেখক কবি বংশীদাসের কন্যা। পিত। ও কন্যা একত্র হইয়া মনসাদেবীর ভাসান ১৫৭৫ খৃঃ অব্দে রচনা করিয়াছিলেন। পিতার আদেশে চন্দ্রাবতী বাঙ্গালা ভাষায় একখানি রামায়ণ রচনা করেন, তাহ। পূর্ব্ব-মৈমনসিংহে মহিলা-সমাজে এখনও ঘরে ঘরে পঠিত ও গীত হইয়া থাকে। তাহার একখানি আমাদের সংগ্রহের মধ্যে আছে। জয়চন্দ্রকে ভালবাসিয়া এই সাধ্বী ব্রাহ্মণললনা যে মর্ম্মন্তুদ কষ্ট পাইয়াছিলেন এবং সেই ঘোর পরীক্ষার আগুনে পুড়িয়া তিনি কিরূপ বিশুদ্ধ সোনার ন্যায় নির্ম্মল হইয়। উঠিয়াছিলেন, তাহা এই গাথাটিতে বর্ণিত আছে। বঙ্গসাহিত্যের ইতিহাসজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই চন্দ্রাবতীর পরিচয় ভাল করিয়া জানেন। বংশীদাসের পিতার নাম ছিল যাদবানন্দ এবং মাতার নাম ছিল অঞ্জনা। চন্দ্রাবতী নিজে বংশ ও গৃহপরিচয় এইভাবে দিয়াছেন—

“ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বহি যায়।
বসতি যাদবানন্দ করেন তথায়॥
ভট্টাচার্য্য ঘরে জন্ম অঞ্জনা ঘরণী।
বাঁশের পাল্লায় তালপাতার ছাউনী॥
ঘট বসাইয়া সদা পূজে মনসায়।
কোপ করি সেই হেতু লক্ষ্মী ছাড়ি যায়॥
দ্বিজবংশী বড় হৈল মনসার বরে।
ভাসান গাইয়া যিনি বিখ্যাত সংসারে॥
ঘরে নাই ধান-চাল, চালে নাই ছানি।
আকর ভেদিয়া পড়ে উচ্ছিলার পানি॥