পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৸৹
মৈমনসিংহ-গীতিকা

ভাসান গাইয়া পিতা বেড়ান নগরে।
চাল-কড়ি যাহা পান আনি দেন ঘরে॥
বাড়ীতে দরিদ্র-জ্বালা কষ্টের কাহিনী।
তাঁর ঘরে জন্ম নিলা চন্দ্রা অভাগিনী॥
সদাই মনসা-পদ পূজি ভক্তিভরে।
চাল-কড়ি কিছু পান মনসার বরে॥
দূরিতে দারিদ্র্যদুঃখ দেবীর আদেশ।
ভাসান গাহিতে স্বপ্নে দিলা উপদেশ॥
সুলোচনা মাতা বন্দি দ্বিজবংশী পিতা।
যাঁর কাছে শুনিয়াছি পুরাণের কথা॥
মনসা দেবীরে বন্দি জুড়ি দুই কর।
যাঁহার প্রসাদে হৈল সর্ব্ব দুঃখ দূর॥
মায়ের চরণে মোর কোটি নমস্কার।
যাঁহার কারণে দেখি জগৎ সংসার॥
শিব-শিবা বন্দি গাই ফুলেশ্বরী-নদী।
যার জলে তৃষ্ণা দূর করি নিরবধি॥
বিধিমতে প্রণাম করি সকলের পায়।
পিতার আদেশে চন্দ্রা রামায়ণ গায়॥”

 দেখা যাইতেছে জয়চন্দ্রের সঙ্গে বিবাহপ্রস্তাব ভাঙ্গিয়া যাইবার পরে এবং চন্দ্রার আজীবন কুমারীব্রত-গ্রহণের পর এই রামায়ণ লিখিত হইয়াছিল। কারণ এই গাথায়ই আছে, মনে শান্তিস্থাপনের জন্য বংশী চন্দ্রাকে রামায়ণ লিখিতে আদেশ করিয়াছিলেন। যদিও চন্দ্রার এই বন্দনায় সেই প্রেমঘটিত কথার কোন উল্লেখ নাই, তথাপি তাঁহার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখ যে চলিয়া গিয়াছিল “চন্দ্রা অভাগিনী” কথাটাতেই তাহার কিছু আভাস আছে। তিনি যে পিতৃগৃহের গলগ্রহ হইয়া তাঁহাদের চিরকষ্টদায়ক হইয়া থাকিতেন—ঐ পদের পুর্ব্ব-ছত্রে সে কথাও রহিয়াছে। এই গাথার পূর্ণ আলোকপাতে চন্দ্রার করুণ আত্মবিবরণীটি আমাদের নিকট পরিষ্কার হইয়াছে। চন্দ্রাবতীর পিত্রালয় ফুলেশ্বরী নদীর তীরস্থ পাতুয়ারী গ্রামে যে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, এবং যে মন্দিরের গাত্রে জয়চন্দ্র রক্তমালতীপুষ্পের রস দিয়া বিদায়পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহা ফুলেশ্বরীর তীরে নিষ্ঠাবতী রমণীর নৈরাশ্যকে ভগবদ্‌ভক্তিতে উজ্‌জ্বল করিয়া এখনও জীর্ণ অবস্থায় বিদ্যমান। জয়চন্দ্রের বাড়ী ছিল সুন্ধ্যা গ্রামে, তাহা পাতুয়ারীর অদূরবর্ত্তী ছিল। নয়ানচাঁদ ঘোষ কোন্ সময়ে এই গাথাটি রচনা