পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৸৵৹
মৈমনসিংহ-গীতিকা

 ৬। দস্যু কেনারাম—চন্দ্রাবতী প্রণীত। চন্দ্রাবতীর পরিচয় তৎসম্বন্ধীয় গাথার বিবরণে প্রদত্ত হইয়াছে, পুনরুল্লেখ নিম্প্রয়োজন। কেনারামের বাড়ী ছিল বাকুলিয়া গ্রামে। নলখাগড়ার বনসমাকীর্ণ সুপ্রসিদ্ধ “জালিয়ার হাওর” কিশোরগঞ্জ হইতে ৯ মাইল পূর্ব্বদক্ষিণে, এইখানেই বংশীদাসের সঙ্গে কেনারামের সাক্ষাৎ হয়। এই গীতোক্ত ঘটনা ১৫৭৫ হইতে ১৬০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে কোন সময়ে হইয়াছিল। প্রবাদ এই যে, প্রেমাহতা চন্দ্রা জয়চন্দ্রের শব দর্শন করার অল্পকাল পরেই হৃদরোগে লীলা সংবরণ করেন। ফুলেশ্বরী নদীর গর্ভেই কেনারাম তাহার মহামূল্য ধনরত্ন বিসর্জন দিয়াছিল। এই গীতের মোট ছত্রসংখ্যা ১০৫৪, তাহার মধ্যে অনেকাংশ মনসাদেবীর গান, সেগুলি অপরাপর কবির লেখা, সুতরাং আমি গাথাটির অনেকংশ বর্জন করিয়াছি। মনসাদেবীর গানের মধ্যে যেখানে চন্দ্রাবতীর লেখা কেনারামের বিবরণ আছে, সেই সেই স্থান আমি নক্ষত্রচিহ্নিত করিয়াছি।

 ৭। রূপবতী-এই গাথাটি সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলিবার নাই। কবির নাম পাওয়া যায় নাই। ছত্রসংখ্যা ৪৯৩। ১৯২২ খৃঃ অব্দের ৩০শে মার্চ্চ ইহা আমার হস্তগত হয়। আমি ইহাকে ৭ অঙ্কে বিভাগ করিয়াছি। এই গাথার সম্বন্ধে অন্যান্য তথ্য ইংরেজী ভূমিকায় দিয়াছি।

 ৮। কঙ্ক ও লীলা—এই গাথার রচক ৪ জন, দামোদর, রঘুসুত, নয়ানচাঁদ ঘোষ ও শ্রীনাথ বেনিয়া। রঘুসুত ২৫০ বৎসর পূর্বে জীবিত ছিল, ইহারা জাতিতে পাটুনি, বহু পুরুষ যাবৎ ইহারা গায়কের ব্যবসা করিতেছে, ইহারা এজন্য ‘গায়েন’ (ময়মনসিংহে ‘গাইন’) উপাধিতে পরিচিত। রঘুসুতের নিম্নতম বংশধর, রামমোহন গায়েনের পুত্র শিবু গায়েন ‘কঙ্ক ও লীলা’র পালা অতি উৎকৃষ্টভাবে গাইতে পারিত। ইহাদের বাড়ী নেত্রকোণায় কেন্দুয়া থানার অধীন “আওয়াজিয়া” গ্রাম। উৎকৃষ্ট পালাগায়ক বলিয়া ইহারা গৌরীপুরের জমিদারদিগের নিকট হইতে অনেক নিষ্কর জমি পুরস্কারস্বরূপ লাভ করিয়াছে। ২০।২১ বৎসর হইল শিবু গায়েনের মৃত্যু হইয়াছে। কবিকঙ্ক পূর্ব্ববঙ্গের সাহিত্যাকাশের একটি উজ্‌জ্বল নক্ষত্র; ইনি বিপ্রবর্গ বা বিপ্রগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঐ গ্রাম কেন্দুয়ার অদূরবর্ত্তী রাজেশ্বরী বা রাজী নদীর তীরে, বিপ্রবর্গের নিকট ধলেশ্বরী বিলের সন্নিকট এখনও পাঁচপারের একটা জায়গা আছে এবং তথায় “পারের পাথর” নামক একটা পাথর আছে। গীতোক্ত পীর এইখানে আডিডা করিয়াছিলেন।

 কবিকঙ্কের রচিত “মলুয়ার বারমাসী” এক সময়ে পূর্ব-মৈমনসিংহের কাব্যরসের খনি ছিল। এখনও তাহার দুই-একটি গান গ্রাম্যকৃষকের মুখে শোনা যায়। এখন পর্য্যস্ত আমরা পালাটি সংগ্রহ করিতে পারি নাই। কিন্তু চন্দ্রকুমারের বহু চেষ্টায় কবিকঙ্কের “বিদ্যাসুন্দর”-খানি সংগৃহীত হইয়াছে। এই বিদ্যাসুন্দরের মুখবন্ধে কবি তাঁহার পিতামাতার