পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৵৹
মৈমনসিংহ-গীতিকা

 সুতরাং আমার কথা যাউক,—দীনহীন চির-অভাবগ্রস্ত দুর্ভাগ্য চন্দ্রকুমারকে কোন উৎসাহ দেওয়া কি মৈমনসিংহবাসীর কর্ত্তব্য নহে? এই যে তাঁহাদের দেশের পল্লীগাথা সমস্ত বঙ্গসাহিত্যে এক অতি উচ্চ স্থানের দাবী করিতেছে, সেই গাথাভাণ্ডারের উদ্ধারকল্পে কি তাঁহার। নিশ্চেষ্ট থাকিবেন, ইহার জন্য কি কোন ব্যবস্থাই হইবে না?

 গাথাসাহিত্যের ভাষা পাড়াগেয়ে, ছন্দ শিশুর আধ আধ বুলির মত ভাঙ্গা ভাঙ্গা,—পূর্ণতা পায় নাই। কিন্তু বিবেচনাপূর্বক বিচার করিলে দেখিতে পাইবেন, চলিত ভাষায় আজ যাহা সুন্দর ও মার্জিত, পরবর্ত্তী কালে তাহা ‘সেকেলে’ ও অমার্জিত হইয়া পড়িয়াছে। ঈশ্বর গুপ্তের ভাষা এক সময়ে আদর্শ ভাষা ছিল, সেকেলে লোকেরা শতমুখে তাহা প্রশংসা করিতেন, এখন সে ঈশ্বর গুপ্তের ভাষা কি আর কেহ প্রশংসা করেন? এমন কি বঙ্কিমবাবুব ভাষাগৌরব পর্য্যন্ত কতকটা অস্তমিত হইয়া পড়িয়াছে।

 এই ভাষার ঐশ্বর্য্যের কথা ছাড়িয়া দিলে, জাতীয় আদশ-সংস্থাপনে—কবিত্বে ও কারুণ্যে, মর্ম্মকথার অভিব্যক্তিতে ও চরিত্রমর্য্যাদা-রক্ষণে—ঐতিহাসিকতায় ও কল্পনার শোভায়, এই গাথাগুলি বঙ্গসাহিত্যকে এক নব জয়শ্রী পরাইবে, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই।

 এই গাথাসাহিত্য উদ্ধারকল্পে যিনি কোনরূপ সাহায্য করিতে ইচ্ছুক হইবেন, তিনি নিম্নের ঠিকানায় আমাকে স্মরণ করিবেন। আমি সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় তাঁহাকে জানাইব।

২৪শে নবেম্বর, ১৯২৩

 ৭, বিশ্বকোষ লেন,

বাগবাজার – কলিকাতা
শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন