সতীনের কাঁটা আমি নিৰ্চয়[১] ভাঙ্গবাম।
ছন কিম্বা জোরে পারি আর না ছাড়বাম॥
বল্যা গেছে দেওয়ান আরে কালুকা সকালে।
পাঠাইবান আলাল দুলাল আন্দর মহলে॥
নানা মতে সাজাই আমি আন্দর মহল।
তাই সে পর্কাশ করব[২] আমার আদর কেবল॥
এমন করিবাম যাইতে[৩] সর্ব্ব লোকে বলে।
জান্ দিয়া ভালবাসি সতীপুত সগলে॥
নিজের হাতে ছিঁড়ি মুণ্ডু যুদি অগোচরে।
তেও[৪] যেন মোর কথা কেউ বিশ্বাস না করে॥”
এতেক কহিয়া বিবি আন্দর সাজায়।
যত মতে পারে নাইসে তিরুডী তাহায়॥
কত কত মিডাই[৫] বিবি যোগাড় করিয়া।
থরে থরে রাখে বিবি আন্দরে সাজাইয়া॥
আর যত খাদ্য জিনিস নিজ হাতে রান্ধিল।
রাত্র থাকিতে বিবি রান্ধন শেষ করিল॥
এই মত নানা ইতি দ্রব্য সাজাইয়া।
সতীপুতেরার লাগ্যা রইল বসিয়া॥
বগা যেমন চউখ বুজ্ঞ্যা পাগারের ধারে।
সাধু অইয়া বস্যা থাক্যা পুডী মাছ ধরে॥
মনসুর বয়াতী কয় সেই মতন রইয়া।
বিবি রইল যেমন খাপ ধরিয়া॥[৬]
- ↑ নির্চয়, নির্ছয়=নিশ্চয়।
- ↑ পরকাশ কর্ব=প্রকাশ করিব।
- ↑ যাইতে=যাহাতে।
- ↑ তেও=তবু।
- ↑ মিডাই=মিঠাই।
- ↑ বগা—খাপ ধরিয়া। বগা=বক; বুজ্ঞ্যা=বুজিয়া; বস্যা থাক্যা=বসিয়া থাকিয়া; পুডী=পুঁটী (মাছ)। খাপ ধরিয়া=শিকার-প্রত্যাশায় প্রস্তুত থাকিয়া!
মনসুর বয়াতী বলিতেছে, “বক যেমন নিরতিশয় নিরীহতার ভান করিয়া পগারের ধারে চোখ বুজিয়া বসিয়া সুবিধামত পুঁটী মাছ ধরে, তদ্রূপ ‘বকধার্মিক-প্রকৃতি’ দেওয়ান-গৃহিণী আলাল দুলালের আগমন-প্রতীক্ষায় প্রস্তুত হইয়া বসিয়া রহিল।