পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহুয়া
১৯

(১২)

নদের চাঁদের নিরুদ্দেশ

রাত্রি নিশাকালে পুত্র‍ু কি না কাম করিল।
উরদিশে[১] মায়ের পায়ে পন্নাম করিল॥
“সাক্ষী হইও চান্দ সুরুয সাক্ষী হইও তুমি।
ঘর দোয়ার ছাড়িয়া আজি বৈদেশী হইলাম আমি॥
মা রইলো বাপ রইলো রইলো রে সুদুর[২] ভাই।
সকল থাকিতে আমার কেউ যেন নাই॥
চান্দ সূরুয পন্নাম করি পন্নাম করি সবে।
মায় বাপে পন্নাম করি যাইব বৈদেশে॥”
রাত্র নিশাকালে ঠাকুর কি কাম করিল।
বাইদ্যার নারীর লাগ্যা ঠাকুর বৈদেশী হইল॥ ১—১০

(১৩)

মহুয়ার সন্ধানে নদের চাঁদের ভ্রমণ

কিসের গয়া কিসের কাশী কিসের বৃন্দাবন।
বাইদ্যার কন্যা খুজতে ঠাকুর ভর্‌মে তিরভুবন[৩]
একমাস দুইমাস আরে ভালা তিনমাস যায়।
খুঁজ্যা না পাইল দেখা ভর্‌মিয়া বেড়ায়॥
কোথায় আছে জইতার পাহাড়[৪] কোথায় গহীন বন।
পাগল হইয়া নদীয়ার চাঁন ভর্‌মে তিরভুবন॥
পন্থে যারে দেখে ঠাকুর তারে ডাক দিয়া পুছ করে[৫]
“বিদেশী বাইদ্যার লাগাল পাইবাম কত দূরে॥

  1. উরদিশে = উদ্দেশে।
  2. সুদুর = সহোদর।
  3. তিরভুবন = ত্রিভুবন।
  4. “জইতার পাহাড়ের” কথা মহুয়া নদের চাঁদকে যাইবার পূর্ব্বে বলিয়া গিয়াছিল। ইহা গারো পাহাড়ের অন্তর্গত।
  5. পুছ করে=জিজ্ঞাসা করে। পূর্ববঙ্গের অনেক স্থলে মুসলমানেরা “পুছ করে” কথা ব্যবহার করিয়া থাকে; “পৃচ্ছ” শব্দের অপভ্রংশ।