পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
মৈমনসিংহ-গীতিকা

“যে ঢেউয়ে ভাসাইয়া নিল আমার নদীয়ার চান।
সেই ঢেউয়ে পড়িয়া আমি তেজিবাম পরাণ॥”
ঝম্প দিতে সুন্দর কন্যা মাঝিমাল্লায় ধরে।
কি কাম করিল হায় দুষ্মন সদাগরে॥

“কাল না ডাঙ্গর আঁখি লম্বা মাথার চুল।
বিধি আইজ মিলাইল মধুভরা ফুল॥
এমন যৌবন কন্যা যায় অকারণ।
আমারে ভজহ কন্যা রাখহ মোর মন॥
এমন সোনার পান্‌সী তাতে মাঝি নাই।
যৌবন চলিয়া গেলে কেউ না দিব ঠাই॥
ফুলে ভরা মধু কন্যা ফির একেশ্বরী।
তোমারে পাইলে আমি বাঞ্ছা পূর্ণ করি॥
বসনভূষণ দিব আমি দিব নীলাম্বরী।
নাকে কানে দিব ফুল কাঞ্চা[১] সোনায় গড়ি॥
গন্ধতৈল দিয়া তোমার বাইন্ধা দিবাম কেশ।
ঘরে আছে দাসীবান্দী তোমার নাই ক্লেশ॥
শয্যা তারা পাইতা দিব চরণ দিব ধুইয়া।
সুবর্ণ পালঙ্কে তুমি থাকবা কন্যা বইয়া[২]
শীতের রাইতে দুঃখ নাই লেপ তুলভরা।
মন যোগাইতে দাসী তোমার সাম্‌নে থাক্‌ব খারা॥
হাতীঘোড়া আছে আমার লোকলস্কর।
সবার ঠাকুরাইন[৩] হইয়া থাকবা আমার ঘর॥
বাড়ী পাছে শানে বান্ধা চারি কোনা পুষ্কুনি।
সেই ঘাটেতে আমার সঙ্গে সাঁতার দিবা তুমি।
অন্দর ময়ালে[৪] আমার ফুলের বাগান।
দুইজনে তুলিব ফুল সকাল ও বিয়ান[৫]

  1. কাঞ্চা=কাঁচা
  2. বইয়া = বসিয়া।
  3. ঠাকুরাইন = ঠাকুরাণী।
  4. ময়ালে = মহলে।
  5. সকাল ও বিয়ান = খুব ভোরে ও প্রাতঃকালে।