এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহুয়া
৩৩
“বনে আছে গাছের পাতা তুইল্লা[১] দিবাম আমি।
এই গাছে বাঁচিবে তোমার পতির পরাণী॥[২]
দারুণ আকাল্যা জ্বর[৩] হাড়ে লাগ্যা আছে।
পরাণে বাঁচিয়া আছে মইরা না সে গেছে॥
শ্বাসেতে ধরিয়া[৪] পাতা আন নদীর পানি।
এই মন্ত্রে বাঁচাইব তাহার পরাণি॥”
এক দিন দুই দিন তিন দিন যায়।
চারি দিনে নদ্যার চান আঁখি মেলি চায়॥
ডাক দিয়া সন্ন্যাসী কয় অতি ভোরবেলা।
“আমার ফুল তুলবে কন্যা যাইও একেলা॥”
ফুল তুলিবারে কন্যা যায় দূর বনে।
নিত[৫] নিত পূজার ফুল হাজি[৬] ভইরা আনে॥
উট্টা বসে নদ্যার চান খাইত চায় ভাত।
তা শুন্যা মহুয়া কান্দে শিরে দিয়ে হাত॥
“কোথায় পাইবাম ভাত আমি এই গইন বনে।”
ফুল নাহি তুলে কন্যা থাকে অন্যমনে॥[৭]
এদিকে হইল কিবা শুন দিয়া মন।
কন্যার যইবন[৮] দেখি মনির[৯] ভুলে মন॥
আট্কা টাট্কা পূজার ফুল হাজি ভরা থাকে।[১০]
নিশি রাত্রে[১১] মনি আইস্যা মহুয়ারে ডাকে॥
- ↑ তুইল্লা = তুলিয়া।
- ↑ এই গাছে - - - পরাণী = এই যে গাছের পাতা আমি তুলিয়া দিতেছি, তাহাতেই তোমার পতির জীবন বাঁচিবে।
- ↑ আকাল্যা জ্বর = কাল-জ্বর, বিষম-জ্বর।
- ↑ শ্বাসেতে ধরিয়া = নিশ্বাস রোধ করিয়া।
- ↑ নিত=নিত্য।
- ↑ হাজি = সাজি।
- ↑ ফুল - - - অন্যমনে = নদের চাঁদকে ভাত দিতে না পারিয়া মহুয়া ফুল তুলিতে যায় না, বিমর্ষভাবে ও অন্যমনস্ক হইয়া থাকে।
- ↑ যইবন= যৌবন।
- ↑ মনির = মুনির।
- ↑ আট্কা - - - থাকে =যদিও সদ্য তোলা ফুলে সাজি পূর্ণ, তথাপি।
- ↑ নিশি রাত্রে = গভীর রাত্রিতে।
5--1918 B.T.