পাতা:মৈমনসিংহ গীতিকা (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
মৈমনসিংহ-গীতিকা।

ধারের কাচি[১] আন্যা মায়ে তুল্যা দিল হাতে।
“ক্ষেতে যাওরে পুত্রু আমার ধান্য যে কাটিতে॥”

পাঞ্চ গাছি বাতার[২] ডুগল[৩] হাতেতে লইয়া।
মাঠের মাঝে যায় বিনোদ বারমাসী গাইয়া॥
আশ্বিন্যা পানিতে দেখে মাঠে নাইক ধান।
এরে[৪] দেখ্যা চান্দ বিনোদের কান্দিল পরাণ॥

চান্দ বিনোদ আসি কয় মায়ের কাছে।
“আইশ্‌না পানিতে মাও সব শস্যি গেছে॥”
মায়ে কান্দে পুত্র কান্দে সিরে দিয়ে হাত।
সারা বছরের লাগ্যা গেছে ঘরের ভাত॥
টাকায় দেড় আড়া[৫] ধান পইড়াছে আকাল[৬]
কি দিয়া পালিব মায় কুলের ছাওয়াল॥
পোষ মাসে পোষা আন্ধি[৭] বিনোদে ডাকিয়া।
মায় পুতে যুক্তি করে ধরেতে বসিয়া॥

আছিল হালের গরু বেচিয়া খাইল।
পাঁচ গোটা ক্ষেত বিনোদ মাজনে[৮] দিল॥

  1. ধারের কাচি = তীক্ষ্ন কাস্তে।
  2. পূর্ব্ববঙ্গে “বাতা” শব্দ নানা স্থানে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা অঞ্চলে বেড়া আট্‌কাইবার জন্য উহার মধ্যে মধ্যে যে চাঁছা বাঁশ ব্যবহৃত হয়, তাহাকে বাতা বলে। কিন্তু ময়মনসিংহে ঐরূপ ব্যবহারের জন্য “বাতা” নামক একরূপ স্বতন্ত্র গাছই পাওয়া যায়।
  3. ডুগল = অগ্রভাগ। প্রথম দিন ধান ফাটিবার সময়ে কৃষকেরা পাঁচটি বাতা গাছের অগভাগ লইয়া ক্ষেত্রে যায়, তাহা সিন্দুর প্রভৃতি মাঙ্গলিক দ্রব্যে অনুলিপ্ত হয়। এই বাতার পাঁচটি ‘ডুগলের’ সঙ্গে পাঁচটি ধান্যের ছড়া বাঁধা হয়, তাহাই কৃষকেরা লক্ষ্মীর আসন মনে করিয়া ঘরের কোণে বিশিষ্ট জ্বলে তুলিয়া রাখে।
  4. এরে=ইহা।
  5. এক আড়া = ৪ মণ।
  6. আকাল = অকাল, দুর্ভিক্ষ।
  7. পোষা আন্ধি=পৌষ মাসের কুয়াসার অন্ধকার।
  8. মাজনে = মহাজনকে।