পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মোগল-বিদুষী

গুলের পরিণয়-ক্রিয়া সম্পন্ন হইয়া গিয়াছিল; তাই তাহার এ বেশপরিবর্ত্তন। যাহা হউক, পরমুহূর্ত্তেই হুমায়ূন্ তাহাকে চিনিতে পারিয়া স্নেহোদ্বেলিত আকুলকণ্ঠে বলিতে লাগিলেন,— ‘গুল্, প্রবাসে তোমার কথা আমার প্রায়ই মনে হইত, আর আমার মন কেমন করিত। তোমাকে সঙ্গে লইয়া যাই নাই বলিয়া আমার কতই না আপ্‌শোষের কারণ হইয়াছিল। কিন্তু তারপর ভাগ্যে যখন পরাজয় ঘটিল, তখন ভাবিলাম, ভগবান্ যাহা করেন মঙ্গলের জন্যই। তোমাকে সঙ্গে লইয়া যাইবার ইচ্ছা হয় নাই বলিয়া তৎক্ষণাৎ আমি করুণাময় খোদাকে শত শত ধন্যবাদ করিয়াছি! আকীকাকে লইয়া গিয়া কি ভুলই করিয়াছিলাম। হায়! সেই শিশুর জন্য আমার হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইতেছে।’

 যাহা হউক অবমানিত ও মর্ম্মপীড়িত সম্রাট্ পরাজয়ের প্রতিশোধ লইবার জন্য অতঃপর উপযুক্ত আয়োজন করিয়াছিলেন। ইহার ফলে কনৌজের রণক্ষেত্রে শেরের সহিত হুমায়ূনের আর একবার সঙ্ঘর্ষ হয় (১৫৪০, মে)।

 বৈমাত্রেয় ভ্রাতা কামরান্ আগ্রায় হুমায়ূনের প্রতিনিধি-স্বরূপ ছিলেন। তিনি সুসময় বুঝিয়া সৈন্যসামন্তসহ লাহোরে প্রস্থান করিলেন এবং ভগিনী গুল্‌বদন্‌কে হস্তগত করিবার অভিপ্রায়ে হুমায়ূন্‌কে বারংবার অনুরোধ করিয়া পত্র লিখিতে লাগিলেন,—‘আমার বড় অসুখ। দেখিবার শুনিবার কেহ নাই। গুল্‌বদন্‌কে পত্রপাঠমাত্র এখানে পাঠাইয়া দিলে আমি যারপরনাই উপকৃত হইব।’ ভ্রাতৃবৎসল, সরলমতি হুমায়ূনের হৃদয় গলিয়া গেল।

২০