তিনি ভ্রাতার ছলনা বুঝিতে না পারিয়া, গুল্বদন্কে লাহোরে যাইবার অনুরোধ করিলেন। গুলের হৃদয় অভিমানে ভরিয়া উঠিল। হুমায়ুন্কে যে তিনি কিরূপ স্নেহের চক্ষে দেখেন, তাহা এক অন্তর্যামী বই আর কেহ অবগত নহে। তারপর ভাই হইয়া ভাইকে যে বিপদ্কালে সাহায্য না করিয়া নিজের স্বার্থসিদ্ধির পথ দেখে, হুমায়ুন্ গুল্কে তাহার নিকটে যাইতে বলিতেছেন। তিনি হুমায়ূন্কে অনুযোগ করিয়া লিখিলেন,— ‘ভাই, তুমি যে কখনও আমাকে তোমার সঙ্গসুখ হইতে বঞ্চিত করিয়া কামরানের নিকট যাইতে বলিবে, ইহা আমার ধারণারও অতীত। তুমি যাহাই বল না কেন, আমি আশৈশব যাঁহাদের অঙ্কে লালিত, বর্দ্ধিত, সেই মাতা ভগিনী বা আত্মীয়বর্গকে ছাড়িয়া কোথাও এক পা নড়িব না।’
ভগিনীর প্রতি হুমায়ূনেরও স্নেহ অল্প নহে; তিনি করুণ স্নেহপূর্ণ ভাষায় গুল্কে লিখিলেন,—‘ভগিনী! তোমার সঙ্গ-সুখ হইতে বঞ্চিত হওয়া আদৌ আমার অভিপ্রেত নহে। তবে কামরান্ অসুস্থ; বারবার আমাকে অনুরোধ করিতেছে বলিয়াই তোমাকে যাইতে বলিতেছি। বিশেষ আমি এখন বড়ই বিপন্ন — সিংহাসন লইয়া চিন্তিত। এই বিপদ্-সাগর উত্তীর্ণ হইতে পারিলেই আবার তোমাকে আমার নিকট লইয়া আসিব।’
স্নেহের দায় বড় দায়। গুল্ ভ্রাতার এ স্নেহের অনুরোধ কেমন করিয়া উপেক্ষা করিবে? একান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাহাকে কামরানের নিকট লাহোরে যাইতে হইল।
২১