ওদিকে বিপুল আয়োজনসত্ত্বেও দৈববিড়ম্বিত হুমায়ূন্ শের শার সহিত আঁটিয়া উঠিতে পারিলেন না। ‘তরল-তরঙ্গা’ তটঘাতিনী গঙ্গা সহসা রণরঙ্গিনী মূর্ত্তিতে, বাদ্শাহী-বাহিনীকে গ্রাস করিতে উদ্যত হইলেন। আবার গঙ্গাগর্ভে শত শত সেনার সমরলীলার অবসান হইল। হুমায়ূন্ অল্পসংখ্যক অনুচর-সহচরসহ কোনক্রমে প্রাণ লইয়া ফিরিলেন।
ফিরিলেন সত্য, কিন্তু হিন্দুস্থানের রাজসিংহাসন তখন তাঁহার নিকট ‘নিশার স্বপনসম’ অলীক। হৃতবল সম্রাট্ প্রবল আততায়ীর আসন্ন গ্রাস হইতে আগ্রা রক্ষা অসম্ভব জানিয়া প্রস্থান করিতে বাধ্য হইলেন।
কিন্তু স্থান কোথায়? মাথা গুঁজিয়া দাঁড়াইবার মত যৎসামান্য একটু স্থানেরও যে হুমায়ূনের একান্ত অভাব। কাল যিনি আশ্রিতের আশ্রয়,—বিশাল বিপুল হিন্দুস্থানের রাজরাজেশ্বর, ভাগ্যবিধাতা,—যাঁহার অঙ্গুলী-হেলনে শত শত বীর রণাঙ্গনে শির ডারিতে সমুৎসুক, বিধির বিধানে আজ তিনি নিতান্ত নিরাশ্রয়— পথের ফকীর! কিন্তু পথের ফকীরেরও পথের আশ্রয় নিরাপদ; হুমায়ূনের পদে পদে ভয়, পলে পলে বিভীষিকা। সম্মুখে অন্ধকার —পশ্চাতে শের শাহ্!
ভ্রাতৃগণের মধ্যে কামরান্ই অধিক শক্তিশালী। তিনি তখনও লাহোর পরিত্যাগ করেন নাই; কিন্তু তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ অপেক্ষা অরণ্যবাসও সহস্রগুণে শ্রেয়ঃ। ভ্রাতা হইয়াও তিনি শত্রুর অধম; সুযোগ এবং সুবিধা পাইলে যে-কোন মুহূর্ভে ভ্রাতার বুকে ছুরি
২২