বসাইতে প্রস্তুত। কিন্তু এ দুর্দ্দিনে তাঁহাকেই হুমায়ূনের মহা-আশ্রয় বলিয়া মনে হইল। একে তাঁহার নিজের নিঃসহায় অবস্থা, তাহার উপর হারেমের মহিলাবর্গ—বিমাতা দিল্দার, বৈমাত্রেয় ভগিনী গুল্চিহ্রা প্রভৃতি তাঁহার স্কন্ধে। আত্মচিন্তা অপেক্ষা অন্তঃপুরললনাগণের চিন্তাই তখন হুমায়ূনের সমধিক প্রবল হইয়া উঠিয়াছে। তিনি মর্ম্মভেদীকণ্ঠে ভ্রাতা হিন্দাল্কে ডাকিয়া বলিলেন,—‘ভাই, স্নেহের পুত্তলী আকীকাকে হারাইয়া আমার পরিতাপের সীমা ছিল না। আমি কতবার তোমাদের বলিয়াছি, কেন তাহাকে আমি আমার চোখের উপরে ধরিয়া নিজের হাতে হত্যা করিলাম না! ভাই, আমার সম্মুখে আবার সেই বিষম সমস্যা উপস্থিত। পথ বিপদ্-সঙ্কুল; এই পথে কুল-ললনাগণকে নিরাপদে লইয়া যাওয়া নিতান্ত দুষ্কর।’
মহিলাগণকে সঙ্গে লইয়া গেলে রক্ষকহীন অবস্থায় তাঁহাদের শত্রুহস্তে পতিত হইবার সম্ভাবনা,— হতাশক্ষুণ্ণ মর্ম্মপীড়িত হুমায়ূন্ তাই তাঁহাদের হত্যা করিয়া নিশ্চিন্ত হইতে চাহিতেছেন। হিন্দাল্ ভ্রাতার বিরুদ্ধে একবার বিদ্রোহী হইয়াছিলেন সত্য, কিন্তু সে ঘটনাচক্রে। প্রকৃতপক্ষে তিনি নিঠুর বা স্নেহ-সহানুভূতিশূন্য নহেন। হুমায়ূনের চিত্তবিকার ও তাঁহার প্রস্তাবের মর্ম্ম বুঝিতে পারিয়া তিনি পুরমহিলাদের ভার স্বীয় স্কন্ধে গ্রহণ করিলেন; ভ্রাতাকে অভয় দিয়া বলিলেন,—‘জীবনের শেষমুহূর্ত্ত পর্য্যন্ত আমি ইঁহাদের জন্য যুঝিব, হৃদয়ের শোণিত দিয়া আমি ইঁহাদের প্রাণরক্ষা করিব।’ হিন্দালের এই উক্তি শুধু অসার সান্ত্বনাতেই
২৩