পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গুল্‌বদন্

 আত্মীয়স্বজন-পরিত্যক্ত, হৃতরাজ্য, হতাশ, ব্যথিতচিত্ত সম্রাট্‌কে অবশেষে সিন্ধুর মরুপ্রান্তরের পথিক হইতে হয়। সঙ্গে কতিপয় প্রভুভক্ত বিশ্বস্ত অনুচর—যাহারা শুধু সম্পদের পারাবত নহে। সম্পদে-বিপদে সম্রাটের সম-অনুরাগী, এরূপ কয়েকজন পরীক্ষিত অনুচরসহ তিনি দীর্ঘকাল মরুভূমির দেশে দেশে, বাত্যা-বিতাড়িত স্খলিত বৃক্ষপত্রের ন্যায় বিচরণ করিয়াছিলেন। ইহার বিস্তারিত বর্ণনায় আমরা পাঠকের চিত্ত ভারাক্রান্ত করিব না। বর্ত্তমান জীবনবৃত্তের জন্য এইটুকু বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, এই সময়েই হুমায়ূনের জীবনে চরম অনর্থের আবির্ভাব হয়। দুঃখ ও কষ্ট, বিঘ্ন ও বিপত্তি তাঁহার মুল্যবান্ জীবনটিকে লইয়া যেন কন্দুকক্রীড়ায় প্রমত্ত হইয়াছিল।

 কিন্তু ঘোর দুর্গতির মধ্য দিয়া ভগবানের অদৃশ্য কল্যাণময় হস্ত যে মানুষের অভিনন্দনের জন্য কোন্ বরণডালা কিরূপে সাজাইয়া তুলেন, বুঝিয়া উঠা কঠিন। হুমায়ূন্ তাঁহার দুঃখপূর্ণ মরুপথের প্রান্ত হইতে যে অপার্থিব স্বর্গীয় কুসুম চয়ন করিতে সমর্থ হইলেন, সম্ভবতঃ সুখপূর্ণ রাজপথের পার্শ্বে তাহার সন্ধান মিলিত না।

 হিন্দাল্, মাতা দিল্‌দারকে লইয়া মূলতানের পাট্ নামক স্থানে শিবির সন্নিবেশ করিয়াছেন। হুমায়ূন্ তখন তাঁহার সন্নিহিত সিন্ধুপতির আশ্রয় প্রার্থনা করিয়া লাঞ্ছিত ও প্রতারিত। এই সময় একদিন তিনি বিমাতা দিল্‌দারের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইয়া তাঁহারই পার্শ্বে এক অপরূপ বালিকামূর্ত্তি নিরীক্ষণ করিলেন।

২৭