পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 মোগল-বিদুষী

বালিকার চিত্তহরা রূপমাধুরী, হুমায়ূনের দাবদগ্ধ তৃষিত জীবনে কোন্ এক অপার্থিব অমৃত-নির্ঝরের মদিরস্বপ্ন বহন করিয়া আনিয়াছিল, কে বলিবে? বাদ্‌শাহ্ দর্শনমাত্র মুগ্ধ হইলেন। পরে যখন সংবাদ লইয়া জানিলেন, অবস্থা ভাল না হইলেও উত্তম কুলেই বালিকার জন্ম—তাঁহারই স্বর্গীয়া জননী মাহমের দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়কন্যা, অলভ্যা নহে, তখন তাঁহার চিত্ত ঐ চতুর্দ্দশবর্ষীয়া বালিকার জন্য যারপরনাই লুব্ধ হইয়া উঠিল।

 কিন্তু প্রেমের পথ কুসুমাস্তীর্ণ হয় না। রূপমুগ্ধ প্রেমোন্মত্ত সম্রাট্ বালিকার দর্শনলাভের জন্য পুনঃ পুনঃ হিন্দালের শিবিরে উপস্থিত হইয়া হতাশ হইতে লাগিলেন। শত উপরোধ-অনুরোধসত্ত্বেও সে দ্বিতীয়বার হুমায়ূনের সমক্ষে উপস্থিত হইতে চাহিল না; এমন কি একদিন স্পষ্টাক্ষরেই এইরূপ অভিপ্রায় প্রকাশ করিল যে, তাহার বাহু যাঁহার কণ্ঠলগ্ন হইতে সমর্থ, এরূপ ব্যক্তিকেই সে পরিণয়পাশে আবদ্ধ করিতে পারে; কিন্তু এমন কাহাকেও সে স্বামিত্বে বরণ করিবে না, যাঁহার বস্ত্রপ্রান্ত স্পর্শ করিতে তাহার হস্ত পৌঁছাইবে না। বালিকার এই উক্তি হইতে উভয়ের অবস্থাগত ও মর্য্যাদাগত তারতম্য সূচিত হইতেছে বলিয়াই মনে হয়।

 প্রেমের স্বভাবই বোধ হয় এই, সে বাধা পাইলে অধিকতর উদ্দাম হইয়া উঠে। বিমাতা দিল্‌দারের শরণাপন্ন হইয়া প্রেমোন্মত্ত সম্রাট্ বালিকার জন্য অধীরভাবে দিন গণিতে লাগিলেন। আশা ও নিরাশার প্রতিকূল ও অনুকূল তরঙ্গের মধ্যে

২৮