পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/৪৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
গুলবদন

মানসপটে সর্ব্বাপেক্ষা উজ্জ্বলবর্ণে ফুটিয়া উঠে, তাহা পতিসেবাপরায়ণা সহধর্ম্মিণীর এবং অপত্যস্নেহময়ী জননীর। কিন্তু এই বিদুষী প্রতিভাশালিনী রমণীকে কেবলমাত্র কল্যাণময়ী গৃহদেবীর আসনে প্রতিষ্ঠিত দেখিয়া আমাদের আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত হয় না। আশৈশব যাঁহার অন্তশ্চক্ষু এই অপূর্ধ্ব দেশের অপূর্ব্ব আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, শোভাসৌন্দর্য্য, শিল্পচাতুর্য্য পর্যবেক্ষণ করিয়া আসিয়াছে,সে সম্বন্ধে তাঁহার চিন্তাধারা কি ভাবে প্রবাহিত হইয়াছিল,তাহা জানিবার জন্য মন স্বতঃই উৎসুক হয়। কিন্তু যতদূর আবিষ্কৃত হইয়াছে, হুমায়ূন্-নামাতে তাহার ইঙ্গিতমাত্র পাওয়া যায় না। অন্তঃপুরবাসিনী হইলেও তিনি যে নিরন্তর অবরোধে আবদ্ধ থাকিতেন, তাহা নহে; সম্রাট্-শিবির-সান্নিধ্যে তাঁহার শিবির অতি সম্মানের স্থান অধিকার করিত বলিয়া ইতিহাসে যে উল্লেখ আছে, তাহাতেই অনুমিত হয়, বাহিরের আলোক তাঁহার পক্ষে দুর্ল্লভ ছিল না। সে আলোকে ভারত-মহিলাগণের যে চিত্র এই মনস্বিনীর মানস-নেত্রে উদ্ভাসিত হইত, কে বলিবে তাহা ছায়াপাতমাত্র করিয়াই মিলাইয়া গিয়াছে? ভারতের সতীধর্ম্ম, জৌহর-ব্রতের অনুষ্ঠান কি এই পতিপরারণা রমণীর হৃদয়ে গভীরতর রেখা অঙ্কিত করে নাই?

 গুল্ যে ফুল অলঙ্কৃত করিয়াছিলেন, নারীর সতীত্ব তাহার গৌরব,—দাম্পত্য-বন্ধনে রমণীর অক্ষুণ্ন বিশ্বস্ততা তাহার গর্ব্ব। বাবরের মাতামহী বন্দিনী হইলে তিনি বিজেতার জনৈক অনুচরের হস্তে 'সমর্পিতা হন। কিন্তু তেজস্বিনী আইস্-দৌলৎ তৎক্ষণাৎ

৪৩