পাইয়াছিলেন। কিন্তু ভাষার অনভিজ্ঞতা সে পক্ষে বিষম অন্তরায় হইয়াছিল। গুল্ যদি সে ভাষা বুঝিতেন, রাজপুত সতীত্ব ও বীরত্বের জ্বলন্ত কাহিনী শুনিয়া তিনি যে অধিকতর মোহিত হইতেন, সন্দেহ নাই। কিন্তু একে দুর্বোধ ভাষা, তাহার উপর এই সকল হিন্দু রমণী সম্রাটের অন্তঃপুরে মুসলমান-রমণীগণ কর্তৃক কখন সমাদরে গৃহীত হন নাই। তথাপি দাম্পত্য-জীবনে এই হিন্দু-বেগমগণের নির্দ্দোষ আচরণ-দর্শনে গুল্বদন্ বুঝিয়াছিলেন যে, জীবনের কর্ত্তব্যপালনে দীক্ষাদান কোন ধর্ম্মেরই নিজস্ব নহে।
কিন্তু হিন্দু ও মুসলমানগণের মধ্যে ভাষা ধর্ম্ম, প্রকৃতি-প্রবৃত্তি সম্পূর্ণ বিভিন্ন হইলেও তীর্থের পবিত্রতা ও তীর্থদর্শনের ইতিকর্ত্তব্যতা সম্বন্ধে উভয় জাতি সমভাবে অনুপ্রাণিত হইত। অতঃপর যখন গুল্বদন্ পুনরায় আমাদের দর্শনপথে পতিত হ’ন, তখন তিনি প্রৌঢ়া রমণী, বয়স প্রায় ৫১ বৎসর,—সম্ভবতঃ বিধবা এবং মুসলমান-ধর্ম্মের অবশ্যপালনীয় পবিত্র ‘হজ্’-ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে পুণ্যতীর্থ মক্কাগমনার্থ একান্ত ব্যাকুলা। কিন্তু সম্রাট্ আক্বর তাঁহাকে বিদায় দিতে নিতান্ত অনিচ্ছুক;—কেবল এখন-তখন করিয়া অকারণ কালহরণ করিতেছেন। সম্রাট্ স্বয়ং এই সময় হজ্-ব্রত পালনের জন্য একান্ত উৎসুক হইয়াছিলেন, এবং সম্ভবতঃ গুল্কে স্বয়ং সঙ্গে লইয়া যাইবার বাসনায় ইতস্ততঃ করিতেছিলেন। কিন্তু আপাততঃ হিন্দুস্থান পরিত্যাগ করা তাঁহার পক্ষে সম্ভবপর হইল না; তীর্থযাত্রীর বেশে একদল মক্কাযাত্রীর সহিত আগ্রা হইতে কিছুদূর গমন করা ভিন্ন তাঁহার ঐকান্তিক কামনাকে তৃপ্তিদান
৪৫