এই ধর্ম্মপ্রাণ বিদ্বান্ মিশনরীকে বিশেষ প্রীতির চক্ষে দেখেন, সে কথাও গুল্ শুনিতে পাইলেন। একোয়াভাইভা বলেন, খ্রীষ্টধর্ম্মের প্রতি সম্রাটের এই প্রীতিদৃষ্টিতে হামীদা বানু ও হারেমের অন্যান্য বেগমেরা সাতিশয় অপ্রসন্ন হইয়া উঠিলেন, এবং ইঁহাদের অসন্তোষধ্বনি যে, গুল্বদন্ ও সম্রাটের হিন্দুপত্নীগণের কণ্ঠনিসৃত বিলাপে পরিবর্দ্ধিত হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। সমগ্র হারেমের প্রতিকূলতায় সম্রাট্ একোয়াভাইভাকে আর আশ্রয় দিতে পারিলেন না।
তীর্থ হইতে ফিরিয়া গুল্বদন্ আগ্রার রাজভবনে ‘হুমায়ূন-নামা’ রচনা করিতে আরম্ভ করেন। তাঁহার রচনা-পাঠে পাঠকের কল্পনানেত্রে যে চিত্র ভাসিয়া উঠে, তাহা পাণ্ডিত্যাভিমানী বিদুষীর নহে,—ভ্রাতৃস্নেহে আত্মবিস্মৃতা ভগিনীর। যে জীবন ভ্রাতার সেবায়, ভ্রাতার মঙ্গলকামনায় অতিবাহিত হইয়াছিল, তাহার সমাপ্তি—ভ্রাতার জীবনকাহিনী-রচনায়। কিন্তু ইহাই তাঁহার একমাত্র রচনা নহে; সেকালের রীতি অনুসারে গুল্ বহু ফার্সী কবিতা রচনা করিয়াছিলেন। সাহিত্যে যে তাঁহার প্রগাঢ় অনুরাগ ও জ্ঞানস্পৃহা অতীব বলবতী ছিল, তাহা তাঁহার সংগৃহীত গ্রন্থরাশি ও প্রতিষ্ঠিত পুস্তকাগার হইতে নিঃসংশয়ে অনুমান করা যায়। মীর মহ্দী শীরাজী-রচিত ‘তাজ কিরতুল্ খওয়াতীনে’ গুলের কোন কবিতার এই দুইটি চরণ উদ্ধৃত আছে:
“হর্ পরী কে উ বা-আশিক্-ই-খুদ ইয়ার নীস্ত্।
তূ ইয়াকীন মীদান্ কে হেচ অঞ্জ উমর্ বর্-খুরদার্ নীস্ত!”
—নিজ প্রেমিকের প্রতি বিমুখ পরী! তুমি নিশ্চয় জানিও যে,
৫৪