পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মোগল-বিদুষী

এই ধর্ম্মপ্রাণা মহিলার অদৃশ্য প্রভাব উদ্যত অশনির পতনরোধ না করিয়াছে? পর পর ভারতের দুইজন প্রতাপশালী সম্রাট্‌কে কল্যাণের পথে চালনা করিয়া সাম্রাজ্য ও সংসারের প্রভূত মঙ্গলসাধন করিয়াছে?

 সংসারে একজাতীয়া নারী আছেন যাঁহাদিগের সাহস ও বীর্যাবত্তা বীরকার্য্যে ব্যক্ত হয় না;—ব্যক্ত হয় নীরব সহিষ্ণুতায়;—যাঁহাদিগের কার্য্যের অভিব্যক্তি কল্যাণে। গুল্ সেই শ্রেণীর মহিলা। সূর্য্য নীরবে উদিত হন—নীরবে অন্ত যান; কিন্তু তাঁহারই আলোকে এই বৈচিত্র্যময়ী সৃষ্টি মানবের দৃষ্টিগোচর হয়। ইতিহাস যে-সকল কীর্ত্তি গৌরবে কীর্ত্তন করে, গুল্ সেরূপ কীর্ত্তিশালিনী ছিলেন না; কিন্তু উদীয়মান মোগল-সাম্রাজ্যের উপর এই বিদুষী মহিলা হুমায়ূন্-নামায় যে উজ্জ্বল আলোকপাত করিয়াছেন, তাহাই তাঁহার জীবনের অপূর্ব্ব গৌরবময়ী কীর্ত্তি, এবং সেইজন্যই তিনি ইতিহাস-সেবিগণের কৃতজ্ঞতা ও অক্ষয় শ্রদ্ধার অধিকারিণী। গুল্‌বদনের গৌরব-সৌরভ ঐতিহাসিক জগৎকে চির-আমোদিত করিবে।

 গুল্‌বদনের আয়ু-সূর্য্য ধীরে ধীরে অস্তাচল অভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিল; জীবনালোক ম্লান হইয়া আসিতেছে। মৃত্যুর দূরপ্রসারিণী দীর্ঘছায়াপাতে চক্ষু জ্যোতিঃহীন; কিন্তু ধর্ম্ম, পুণ্য, পবিত্রতায় তাঁহার অন্তরের দীপ্তি উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিতেছে। ইতিমধ্যে একবারমাত্র ইতিহাসে প্রসঙ্গতঃ তাঁহার নামোল্লেখ দেখা যায়—গুলের বয়ক্রম তখন ৭০ বৎসর। আক্‌বর-নামায়

৫৬