পাতা:মোগল-বিদুষী.djvu/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গুল্‌বদন্

প্রকাশ, সেই সময় তাঁহার দৌহিত্র মুহম্মদ্-ইয়ার সম্রাটের বিরাগ- ভাজন হইয়া রাজদরবার পরিত্যাগ করেন।

 ইহার পর আরও দশ বৎসর কাটিয়া গেল। আক্‌বরের অর্দ্ধ শতাব্দীব্যাপী রাজ্যের দীর্ঘ দিবাও অবসানপ্রায়। গুলের জীবনে কাল-রজনী উদিত হইল। ১৬০৩ খ্রীষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে অশীতিবর্ষ বয়সে গুল্ আগ্রায় শেষ শয্যা গ্রহণ করিলেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত্তেও চিরসঙ্গিনী হামীদা তাঁহার শয্যাপার্শ্বে,—ননদিনীর শুশ্রূষাভার আর কাহারও হস্তে দিয়া তিনি নিশ্চিন্ত নহেন। হামীদা ননদিনীকে আদরে ‘জিউ’ (মহাশয়া) বলিয়া সম্ভাষণ করিতেন। যখন দেখিলেন, অন্তিম শয্যাশায়িনীর চক্ষে মৃত্যুর করাল ছায়া ঘনাইয়া আসিতেছে,—রুগ্ন ভগ্নদেহ হইতে চিরমুক্তি লাভ করিবার জন্য জীবনশ্বাস চঞ্চল হইয়াছে, তখন তিনি স্নেহভরে চিরতরে একবার শেষসম্ভাষণ করিলেন—‘জিউ’? উত্তর না পাইয়া হামীদা পুনরায় নাম ধরিয়া ডাকিলেন—‘গুল্‌বদন্’? মুমূর্ষু ধীরে ধীরে চক্ষুরুন্মীলন করিয়া ভগ্নকণ্ঠে বহুকষ্টে বলিলেন—‘আমি মরিতেছি, তুমি চিরজীবিনী হও।’ যে চক্ষু মোগল-ভাগ্যরবির প্রাতরুত্থান দেখিয়াছিল, তাহা চিরনিমিলিত হইল।

 পিতৃষ্বসার প্রতি অসীম শ্রদ্ধাবান্ সম্রাট্ আকবর কিছুদূর শবাধার বহন করিয়া চলিলেন। নীরব অশ্রুপাত ও ভাষাহীন দীর্ঘশ্বাস তাঁহার মর্ম্মবেদনার পরিচয় দিতে লাগিল। দেহচ্যুত আত্মার শান্তির নিমিত্ত বৃদ্ধ সম্রাট্ সৎকার্য্যে অকাতরে অর্থব্যয় করিলেন। মৃণ্ময় দেহ মৃত্তিকায় সমাহিত হইল।

৫৭