অন্তঃপুরে- অমল রশ্মিপাত করিতেছিলেন। এই মহিয়সী মহিষীর মহান্ আদর্শে মোগলের অন্তঃপুর যে-ভাবে অনুপ্রাণিত হইয়াছিল, তাঁহার ভ্রাতুষ্পুত্রী মুম্তাজ্ তাহা অণুমাত্র ক্ষুণ্ণ করেন নাই। এইরূপ আদর্শ-মাতা এবং মাতার পিতৃষ্বসার অজস্র যত্নসেচনে ও অনুপম পারিবারিক আবেষ্টনে রাজ-অন্তঃপুরলতা জহান্-আরা বর্দ্ধিত হইয়াছিলেন। শাহ্জহান্-সুতা জীবনে বিবাহ করেন নাই; আমরণ কুমারী-ব্রত অবলম্বন করিয়াছিলেন।
মোগল বিদুষীদিগের মধ্যে জহান্-আরার স্থান অতি উচ্চে। ধর্ম্মতত্ত্ব-আলোচনাই তাঁহার সর্ব্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল,—বিশেষতঃ সুফী-সম্প্রদায়ের ধর্ম্মমতের আলোচনা। কোরাণে তাঁহার প্রকৃষ্ট অধিকার ছিল; এই ধর্ম্মগ্রন্থ হইতে উদ্ধৃত প্রাসঙ্গিক রচনাবলী তাঁহার রচিত প্রবন্ধাদিতে প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায়। জহান্-আরা অনেকগুলি ধর্ম্মগ্রন্থ[১] রচনা করিয়াছিলেন; তন্মধ্যে ১৬৩৯-৪০ খ্রীষ্টাব্দে (১০৪৯ হিঃ) রচিত ‘মুনিস্-উল্-আর্ওয়া’ নামে একখানি গ্রন্থ এখন পাওয়া যায়। ইহাতে আজমীরের সুবিখ্যাত সাধু মুঈন-উদ্দীন্ চিশ্তী ও তাঁহার কয়েক জন শিষ্যের জীবন-কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে।
- ↑ আনন্দরাম মুখ্লিস্ ‘চমনিস্তান’ গ্রন্থে (পৃ. ২৫) জহান্-আরার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন, জহান্-আরা দুই-একখানি ধর্ম্মতত্ত্ব-বিষয়ক পুস্তক রচনা করিয়াছিলেন।