পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন S > অপর যুবক কহিল, “ওসব বাজে কথা রাখুন, মশায়। আপনার জমিদারবাবাজীকে এখন একটু সরিয়ে রেখে, আমাদের দুএকটা প্রশ্নের সোজা জবাব দিন দেখি !" আশুতোষবাবু তটস্থ হইয়া কহিলেন, “বলুন, বলুন?” “আমরা জানতে চাই, আপনি এই বিবাহ বন্ধ করবেন কি-না?” যুবকটি কহিল। আশুতোষবাবু কহিলেন, “শুধু শুধু এমন সুযোগ ত্যাগ করবো, আপনারা নিশ্চয়ই তা বলেন না ?” যুবকটি ক্রোধে ফাটিয়া পড়িয়া কহিল, “আমরা কিছুতেই এই কসাইয়ের কাজ হতে দেব না।” আশুতোষবাবু নিরীহ-স্বরে কহিলেন, “চেষ্টা করে দেখুন তাহলে।” একটি যুবক উচ্চ স্বরে কহিল, “ওহে, এটা অর্থ-লোভে অন্ধ হয়ে পড়েছে। মানুষ নয়, পিশাচ। এস আমরা অন্য বন্দোবস্ত করি।” বক্তা যুবকটি আশুতোষবাবুর মুখের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে চাহিয়া কহিল, “তা’ হ’লে আপনি আমাদের কথা শুনবেন না ?” আশুতোযবাবু কহিলেন, “শুনছি বইকি! আর কি বলবেন, বলুন?” ছেলেরা ক্রোধে বাকশূন্য হইয়া কি করা কর্তব্য তাহা নির্ধারণ করিতে চলিয়া গেল। আশুতোষবাবু ক্ষণকাল সেইস্থানে দাড়াইয়া থাকিয়া অস্ফুট কণ্ঠে কহিলেন, “না, ভাল কথা নয়। জমিদারবাবাজীকে এ-খবরটা এখনই দেওয়া প্রয়োজন।” তিনি সদর-ঘর হইতে একটা চাদর গায়ে ফেলিয়া জমিদার-বাড়ীর পথ ধরিলেন। (○) তন্ত্রী কুমার মাধুরীর রূপ-মাধুর্যের আর অবধি ছিল না। অভাগী মেয়েটার অসামান্য রূপই হইল তাহার দুদৈবের একমাত্ৰ হেতু। এই ফুল্লকমল মেয়েটির অপূর্ব দেহত্রীর আকর্ষণেই ৭৫ বৎসরের বৃদ্ধের মনে অস্বাভাবিক ইচ্ছা সঞ্জাত করিয়াছিল। আশুতোষবাবু ব্যবসায়-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি। যখন দশখানা গ্রামের নর-নারী তাহার কন্যার আসন্ন বিপদপাতে উদ্বেগে চিন্তায় অস্থির হইতেছিল, তখন তিনি এই ভাবিয়া মনে প্ৰবোধ পাইতেছিলেন যে, “অদৃষ্টে যদি মেয়ের সুখভোগ থাকে তবে সুখীই হইবে, নইলে কাহারও সাধ্য নাই যে তাহাকে সুখী করিতে পারে। এমনও কি দেখা যায় না যে, স্বাস্থ্যবান রূপবান যুবকপত্রে কনাদন করিয়াও ফুলশয্যর রাত্রেই কন্যা বিধবা হইয়াছেঃ– ধনীর ঘরে কন্যা বধু হইয়া গিয়াও পরে দুটি অন্নের জন্য ভিক্ষা করিয়া বেড়াইতেছে? আরও কি দেখা যায় না যে, দরিদ্রের হাতে কন্যা পড়িয়াও, পরে জমিদার-পত্নীতে রূপান্তরিত হইয়াছে? তবে এত কলহ, বিবাদ, গোলমালের হেতু কী? নিশ্চয়ই কন্যা বৃদ্ধের হাতে পড়িতেছে বলিয়া নহে? ইহা শুধু প্রতিবেশী-সুলভ হিংসা, পেয আর পরশ্ৰীকাতরতা। আশুতোষবাবু ভাবিতেছিলেন, “আমি ঋণ-মুক্ত হইব, আমার কন্যা রাজ্যেশ্বরী হইবে, ইহা এই নর-নারীগুলির আর সহ্য হইতেছে না। নহিলে এই সব চৎকারের আর কোন সঙ্গত অর্থ নাই। আমি কাহারও ভয়ে এইরূপ সুযোগ ত্যাগ করিব না। কন্যা অতুল সম্পদের অধীশ্বরী হইবে, তাহার সকল অভাব তাহাতেই পূর্ণ হইবে।”