পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারাগারে মোহন - እ> Ö ¢ রমা ব্যস্তভাবে আমার হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলবার চেষ্টা করলে—কিন্তু পারলে না। ওদিকে যে-মুহুর্তে প্রফুল্ল মিত্র সিড়ির মুখে পা বাড়িয়েছে, অমনি জাহাজের অফিসার মিঃ বেকারকে কিছু বললেন, কিন্তু বেকার সাহেব নির্বিকার চিত্তে দাড়িয়ে রইলেন। প্রফুল্ল মিত্র নেমে গেল। আমি দেখলুম, পাঁচ সাতজন ছাড়া আর কোন যাত্রীই নেই। বললুম, “এস রমা, এবার আমরা যাই।” - আমার পিছনে ক্যামেরা হাতে রমা অগ্রসর হ’ল। আমরা যেমন সিড়ির মুখে, এসেছি, অমনি বেকার সাহেব আমার দিকে চেয়ে বললেন, “দয়া কোরে এক মুহুর্ত অপেক্ষা করুন |’ 南、 আমি তপ্ত হয়ে বললুম, “কেন? আমার সময় নেই। পথ ছাডুন।” “আহা! এত তাড়া কিসের বলুন তো আপনার?” বেকার সাহেব পথ রোধ কোরে আমার মুখের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে চাইলেন। আমি ক্রোধে আত্মহারা হয়ে বললুম, “এর মানে ? ঢাকার পুলিস-ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর চুন্দকে আটক করবার সাহস আপনার আছে?” মিঃ বেকার শাস্ত স্বরে বললেন, “ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ চন্দ আজ তিন বছর হল মারা গেছেন।” আবার বললেন, “মোহন না?” বোলেই হঠাৎ আমার মাথার উপর আনন্দচ্ছলে একটা আঘাত করলেন। আমি যাতনায় চিৎকার কোরে উঠলুম! সেদিন মাদ্রাজে এক ধনীর সর্বস্ব লুঠ কোরে পালাবার সময় তিন তলার ছাদ থেকে লাফাতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলুম, সে ঘা তখনও সারেনি। বেকার সাহেব অদূরে অপেক্ষমাণ দুজন পুলিস-অফিসারকে ইঙ্গিত করলেন, তারা আমার দু’পাশে এসে দু'জনে দাঁড়ালো। আমি অবশেষে গ্রেফতার হলুম! আর রমা! সে আমার পিছনে দাড়িয়ে সব কথা শুনছিল ও দেখছিল। তা’র মুখের দিকে চেয়ে আমার মনে হ’ল, সে এখনি মূৰ্ছা যাবে। কিন্তু অতিকষ্টে সে আত্মসম্বরণ কোরে সিড়ি বেয়ে নামতে লাগল। আমি একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম। রমার হাতে আমার কমের ছিল। প্রথমে আমার ভয় হয়েছিল, রুম ঐ ক্যামেরা আমাকে ফেরত দিতে চাইবে। কিন্তু বুদ্ধিমতী শিক্ষিতা মেয়ে আমার দিকে একবার চেয়ে আমার মনের কথা বুঝেছিল। সে ক্যামেরা হাতে করে সিড়ির অর্ধ পথ নেমে সহসা টাল খেয়েছে, এমন ভাব দেখিয়ে ক্যামেরাটি হাত থেকে নদীর জলে ফেলে দিল। ক্যামেরার ভিতর কয়েক সহস্ৰ টাকার হীরা ও নোট ছিল। যাক, আমার বিরুদ্ধে জলন্ত প্রমাণ আপাততঃ ইরাবতীর গর্ভে আশ্রয় নিলে! বেকারের সন্দেহ পর্যন্ত হ’ল না। জেটিতে নেমে রমা দ্রুতপদে চলে গেল, একবারও পিছু ফিরে চাইল না। যখন সে অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন আমার মুখ থেকে আমার অজ্ঞাতে বার হ’ল, “দুঃখ এই, আমি একটা হীন দস্য, তাই অমন নারী-রত্বে বঞ্চিত হলুম!” আমার পুরাতন বন্ধু বেকার সাহেব সবিস্ময়ে আমার মুখের দিকে একবার চাইলেন, পরে অফিসারের দিকে চেয়ে আমাকে জেলে নিয়ে যাবার হুকুম দিয়ে বললেন, “এতদিন