পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারাগারে মোহন ծ Օ Ֆ মহারাজকুমার বহুক্ষণ চিন্তামগ্ন রহিলেন। তাহার অতি প্রিয়তম বিলাস সংবাদ পত্রও অধ্যয়ন করা হইল না। তিনি অস্থির চিত্তে পদচারণা করিতে আরম্ভ করিলেন। এখন কি করিবেন তিনি ? কামরূপের মহারাজের মত নিশ্চয়ই তিনি মোহনের পত্রকে উপেক্ষা করিবেন না। দসু মোহন জেলে আবদ্ধ। অথচ সে র্তাহাকে পত্র লিখিয়া বহু লক্ষ টাকা মূল্যের রত্নরাজি দাবি করিল,ইহা কিরূপে সম্ভব হইতে পারে? কুমার নিত্যবিক্রমের শ্লথ শিরাসমূহ ফুলিয়া উঠিল। তিনি মনে মনে কহিলেন, “দসু মোহনের অসম্ভব বলিয়া কোন বিষয় আছে কী? নাই। তবে সে যে তাহার ইচ্ছা পূর্ণ করিবে না, এমন কথা কে জোর করিয়া বলিতে পারে? আমি পারি না।” - বৃদ্ধ রাজকুমার ড্রইংরুমের দ্বার চাবি-বন্ধ করিলেন এবং প্রায় দুই বৎসরের মধ্যে এই প্রথম র্তাহার মোটর বাহির করিতে আদেশ দিলেন। তিনি সবরকমে নিশ্চিত হইয়া ও যাহা চাবি বন্ধ করিবার আদেশ করিয়া, মোটরে আরোহণ করিয়া স্বয়ং পুরীর পুলিস-সুপারের অফিসে উপস্থিত হইলেন। পুলিস-সুপার মাননীয় অতিথির আগমনের হেতু অবগত হইয়া হাসিয়া ফেলিলেন এবং পত্ৰখানি বার বার পাঠ করিয়া হাস্য মুখে কহিলেন, “কুমার নিত্যবিক্রমের সঙ্গে কেউ বিদ্রুপ করেছে।” রাজকুমারের মুখ পুলিস সাহেবের কথায় অধিক পরিমাণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হইল। তিনি কহিলেন, “দসু মোহনের পক্ষে অসম্ভব কিছু নেই। আর সে তথ্য আমার অপেক্ষা আপনার বেশী জানা উচিত ছিল।” মহারাজার তীব্র শ্লেষে পুলিস-সুপার গম্ভীর মুখে কহিলেন, “আপনি ভুলে যাচ্ছেন মোহন মাদ্রাজ জেলে বিচারের অপেক্ষা করছে।” কুমার কহিলেন, “তার পক্ষে অমন একটা দেশী জেল ভেঙ্গে বা’র হয়ে আসা এতটুকু অসম্ভব হবে না।” পুলিস-সুপার কিছু সময় চিন্তা করিয়া কহিলেন, “এই দস্যুটার ওপর এত বেশী অলৌকিকত্ব আরোপ করা হয়েছে যে, মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সী জেলের মত অতি সুরক্ষিত কারাগার সম্বন্ধেও আপনাদের মত বিশিষ্ট ব্যক্তির অশ্রদ্ধার ভাব মনে উদয় হবার সম্ভাবনা হয়! সে যাই হোক, আমি এখনি টেলিগ্রাফ কোরে দসু মোহনের খবর আনিয়ে নিচ্ছি।” তখন টেলিফোনের এরূপ বিস্তৃতি ছিল না। পুলিস-সুপার জরুরী তার পাঠাইয়া দিলেন এবং রাজকুমারকে কহিলেন, “তারের জবাব এলেই আমি আপনার প্রাসাদে দেখা করবো।” মৌখিক ধন্যবাদ দিয়া কুমার নিত্যবিক্রম আপন প্রাসাদে ফিরিয়া আসিলেন। (>o) মহারাজকুমারের সকল শান্তি মন হইতে নির্বাসিত হইল। তিনি প্রাসাদে ফিরিয়া গুপ্ত সুড়ঙ্গপথে ভূগর্ভস্থ কক্ষে প্রবেশ করিলেন। মাতা যেরূপ পীড়িত শিশুর দিকে সমেহ কাতর দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকে, সেইরকম দৃষ্টিতে কুমার বহু পুরুষ ধরিয়া সঞ্চিত ধনরাজির দিকে চাহিয়া চাহিয়া দেখিতে লাগিলেন। তিনি উত্তর দিকের ছোট সিন্দকটা চাবিমুক্ত করিয়া উন্মুক্ত করিলেন। রত্নরাজি ঝলমল