পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S R মোহন অমনিবাস বৈঠকখানায় বসিয়া আশুতোষবাবু তামাকু সেবন করিতেছিলেন ও এই সব বিষয় মনে মনে আলোচনা করিতেছিলেন, এমন সময়ে একটি সুশ্রী সুদৰ্শন-কান্তি যুবক আসিয়া র্তাহাকে প্রণাম করিয়া কহিল, “কাকাবাবু ভাল আছেন? মাধু ভাল আছে?” “আরে কে, সুদর্শন? কলকাতা থেকে কবে এলে? তোমার মা-বাবা ভাল আছেন? বস বাবা, বস।” আশুতোষবাবু যুবকটিকে সমাদরের সহিত আপনার পাশ্বে উপবেশন করাইলেন। আশুতোষবাবুর সতীর্থের পুত্র সুদৰ্শন কলিকাতায় থাকিয়া এম. এ. পড়িতেছে। পাশের গ্রামে বাস করে। আশুতোষবাবু গৃহে সুদর্শনের অবাধ গতিবিধি ছিল। ভবিষ্যতে সে সুদৰ্শনকে কন্যা সম্প্রদান করিতে পারবেন এবং সুদর্শনের মত সর্বাঙ্গসুন্দর পাত্র যেমেয়ের পক্ষে তপস্যার বস্তু তাহাতে ইতিপূর্বে আশুতোষবাবুর বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। মাধুরী ও সুদর্শন শিশুকাল হইতে পরস্পরের পরিচিত। পরিচয় ক্রমে নানা স্তর অতিক্রম করিয়া বর্তমানে এমন এক স্থানে উপনীত হইয়াছে যে তাহদের নিকট তাহা এক অননুভূত, অজ্ঞাত, অপূর্ব পরিস্থিতি। কলিকাতায় সুদর্শন যখন লোক-মুখে শুনিল এবং সংবাদ পাঠ করিল যে, তাহার প্রিয়তমা বাল্যসখী, যৌবনের স্বপ্ন, ভবিষ্যতের সর্বস্ব মাধুরীর সহিত দোর্দণ্ডপ্রতাপ, অমিত অর্থ-বলশালী বৃদ্ধ জমিদারের অস্বাভাবিক যোগাযোগ সংঘটিত হইতে চলিয়াছে, তখন সে আর স্থির থাকিতে পারিল না;কলিকাতা হইতে ছুটিয়া আসিল সংবাদ জানিবার জন্য। মাধুরীর মা নাই। সংসারে পিতা ও এক বিধবা পিসিমাতা ভিন্ন অন্য কেহ ছিল না। পিসিমাতা মাধুরীর পিতার নিকট দৃঢ় প্রতিবাদ জানাইয়া বলিয়াছিলেন, “আশু, ঐ বুড়োর হাতে এমন সোনার চাপা মেয়েকে তুলে দেওয়ার চেয়ে হতভাগীকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেল। তোর কন্যাদায়ও উদ্ধার হবে, আর হতভাগীও মরে বাঁচবে।” আশুতোষবাবু জবাবে বলিয়াছিলেন, “দিদি, তোমাকে তো বাবা অনেক অর্থ ব্যয় কোরে, ধনী-সন্তান প্রথম-পক্ষের হাতে দিয়েছিলেন, তবে বিবাহের পর পাঁচটা বছর কাটতে না কাটতে সর্বস্ব হারিয়ে এমন হয়ে পড়েছিলে কেন?” অগ্রজ বলিয়াছিলেন, “আমার অদৃষ্টে যদি সুখ না থাকে, তবে কে সুখী কুরবে, আশু? তবে আমাদের বাবা-তো আমাকে জেনে-শুনে ইচ্ছা করে এমন ঘাটের মড়ার হাতে সমপণ কোরে যান নি!” ക് আশুতোষবাবু মৃদু হাসিয়া বলিয়ছিলেন, “যদি অদৃষ্ট মানে তবে পুরাপুরি মনতে হবে। মাধুরীর অদৃষ্টে যদি সুখ থাকে, তবে জমিদার বাবাজীর হাতেই সে পরম সুখী হবে, নইলে কিছুতেই হবে না। একে তো দশখানা গ্রামের যত সব ছোকরাদের রাত্রে ঘুম হচ্ছে না আমার মেয়ের অদৃষ্ট ভেবে ভেবে। তার ওপর তুমিও যদি, দিদি, এই সব অশান্তি সৃষ্টি কারো, তবে তো আর বাচা যায় না!” ইহার পর মাধুরীর পিসিমাতা নীরব হইয়াছিলেন, কারণ তিনি র্তাহার চিরপাষণ্ড ছোট ভাইটিকে বিশেষরূপেই চিনিতেন। উপরন্তু তিনি বিশেষরূপে অবগত আছেন যে, পাঁচ বৎসর পূর্বে ভ্রাতার পত্নী-বিয়োগ না হইলে, ভ্রাতার অন্ন মুখে উঠিবার কোন সুযোগই তাহার ঘটিত না। এতএব তাহার দূরদৃষ্টের কথা ভাবিয়া আর উচ্চবাচ্য করিতে সাহস পাইলেন না।