পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারাগারে মোহন Տ Տ (t রাত্রি আটটার মধ্যে কুমার আহার সম্পন্ন করিয়া ভৃত্যদের ছুটি দিলেন। তাহারা প্রাসাদের পশ্চিমাংশে দুইখানি দীর্ঘ মহলে শয়ন করে। তাহারা নিজেরা সেখানে রান্নাবান্না করিয়া আহার করে। ভৃত্যগণ সকাল সকাল ছুটি পাইয়া আপনাদের মহলে চলিয়া গেল। কুমার সাহেব ঘন ঘন ঘড়ির দিকে চাহিয়া মিঃ কোরের জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। তিনি সম্মুখস্থ টেবিলের উপর লাইসেন্স লওয়া একটি বন্দুক, একটি সাতঘরা অটোম্যাটিক রিভলভার ও একখানি তীক্ষুধার তরবারি রক্ষিত করিয়া বারবার সেগুলির দিকে চাহিয়া দেখিতে লাগিলেন। কত অতীতস্মৃতি যে ওই অস্ত্রগুলির সহিত অচ্ছেদ্য সূত্রে আবদ্ধ আছে, উহা একে একে তাহার মনাকাশে উদয় হইতে লাগিল। তিনি চমকিত হইয়া ঘড়ির দিকে চাহিয়া দেখিলেন, মাত্র আটটা বাজিয়া পচিশ মিনিট হইয়াছে। তিনি অধৈর্য চিত্তে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। দসু মোহন লিখিয়াছে, “রাত্রি এগারোটার সময় আসিব, তিনি যেন প্রস্তুত থাকেন।” কুমার সাহেবের মুখে এক টুকরা ক্রুর হাসি ফুটিয়া উঠিল। তিনি মনে মনে কহিলেন, তিনি যে এরূপভাবে প্রস্তুত থাকিতে সক্ষম হইবেন অর্থাৎ মিঃ বেকারকে দৈবক্রমে সহায়করূপে পাইবেন, একথা ঘুণাক্ষরেও দসু মোহন যদি পূর্বাহুে জানিতে পারিত, তবে এরূপ সাংঘাতিক পত্র লিখিবার পূর্বে সে বার বার চিন্তা করিয়া দেখিত। এক সময় অন্যমনস্ক হইয়া কুমার রিভলভারটি হাতে তুলিয়া হইলেন। তাহার মানস নয়নে অতীতের একটি চিত্ৰ ভাসিয়া আসিল। তখন তাহার পূর্ণ যৌবন। বয়স মাত্র ২৫ বৎসর। প্রিয়তমা অসামান্য তরুণীকে পত্নীরূপে পাইয়া তিনি আনন্দে, প্রেমে আত্মহারা। র্তাহার মত ভালবাসিতে জগতের অন্য কোন পুরুষ সক্ষম কি না, সে সময়ে তাহার মনে বিলক্ষণ সন্দেহ ছিল। তিনি পত্নীকে এক মিনিটের জন্যেও চক্ষের আড়াল করিতে বেদনা বোধ করিতেন। একদিন শিকার হইতে ফিরিয়া আসিতে রাত্রি হইয়া গেল। তিনি অন্দরমহলে নিঃশব্দে প্রবেশ করিয়া শুনিলেন, তাহার প্রিয়তমা পত্নী কাহারও সহিত অতি নিম্ন স্বরে কথা কহিতেছেন। তিনি বিস্থিত হইয়া এক ধাক্কায় দ্বার মুক্ত করিতেই একটি অপরূপ সুন্দর যুবক ঘর হইতে ছুটিয়া বাহির হইয়া অন্ধকারে অদৃশ্য হইয়া গেল। তারপর তিনি কিরূপ ভাবে আত্মবিস্মৃত হইয়া প্রিয়তমা নারীকে হস্ত-ধৃত রিভলভারটি দিয়া গুলি করিয়া কুকুরের মত হত্যা করিয়াছিলেন, সহসা তাহার মনে পড়ায় দুই চক্ষু অশ্রুজলে ভরিয়া উঠিল। পত্নী-হত্যার পরদিন যখন তিনি জানিতে পারিলেন, যে যুরুক তাঁহার পত্নীর কক্ষ হইতে পলাইয়া গিয়াছিল, সে আর অন্য কেহ নহে, তাহারই সহোদর–কুমারের সহিত মনান্তর থাকায় এরূপভাবে চলিয়া যাইতে বাধ্য হইয়াছিল, তখন তাহার বুকে যে বেদনা বাজিয়াছিল, আজ পর্যন্ত তাহা ভুলিতে পারেন নাই। উঠিয়াছিল, তাহারা দ্বারা তিনি যেন বলিতে চাহিয়াছিলেন, কি কারণে তুমি আমাকে হত্যা করিলে? আমি কি করিয়াছি? সেই পবিত্র স্মৃতিটুকুর ধ্যানে আজ পর্যন্ত অবিবাহিত জীবন যাপন করিতেছেন। এমন সময়ে দ্বারে মৃদু করাঘাতের শব্দ হইল। তিনি দ্রুতবেগে মুখের অশ্রু নিশ্চিহ্ন করিতে করিতে কহিলেন, “কে ?” *:--