পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন অমনিবাস "ס כי כי (১৩) রাত্রি এগারোটা বাজিল। কুমার সাহেব সচকিত হইয়া উঠিলেন। তিনি দেখিলেন মিস্টার বেকারের চক্ষু ঘুমে ভারী হইয়া আসিতেছে। সহসা তিনি মিঃ বেকারের একটা হাত নাড়িয়া দিয়া ডাকিলেন, “মিঃ বেকার ?” মিঃ বেকার চক্ষু চাহিয়া দেখিলেন, মুখে তীব্র উত্তেজনা লইয়া কুমার তাহার মুখের দিকে চাহিয়া আছেন। কহিলেন, “কি খবর কুমার সাহেব?” সতর্ক নিম্ন-কষ্ঠে কুমার কহিলেন, “রাত্রি ১১টা বাজল।” “তা’ বাজবে। আবার ১২টাও বাজবে। তারপর একটা, দু’টো কোরে রাত্রিও শেষ হয়ে যাবে। তবে সেজন্য আপনার উদ্বেগ কিসের?” মিঃ বেকার ব্যঙ্গ স্বরে কহিলেন। কুমার কহিলেন, “এগারোটার সময় সে আসবে বলেছিল।” “কে আসবে বলেছিল ? মিঃ বেকার সবিস্ময় কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন। কুমার সাহেব আপন ভুল বুঝিতে পারিয়া কহিলেন, “বলেছিল নয়, লিখেছিল। দসু্যু মোহন লিখেছিল!” “তা’ আমি জানি। মিছে আপনি উদ্বেগ অস্থির হচ্ছেন। যদি মোহন তা’র প্রতিজ্ঞা পালন করতে সাহসী হতো, এতক্ষণ আপনার প্রাসাদ রিভলবারের শব্দে আর দস্য মোহনের মরণ আর্তনাদে পূর্ণ হয়ে উঠতো। বুঝেছেন, কুমার?” মিঃ বেকরের মুখে মৃদু হাসি দেখা দিল। কুমার নীরব হইলেন। তিনি তাহার সমগ্র মনোযোগ একাগ্র করিয়া ছিদ্রের ভিতর দিয়া চাহিয়া রহিলেন। দেখিতে দেখিতে রাত্রি ১২টা বাজিল—একটা বাজিল, কুমার সাহেব বসিয়া রহিলেন। মিঃ বেকারের রীতিমত উচ্চ নাসিকা গর্জন চলিতেছিল। তিনি উদ্বেগশূন্য মনে নিদ্রা যাইতেছিলেন। শাস্ত, গভীর নিদ্রা। বৃহৎ প্রাসাদের কোন স্থানেই কোন শব্দ নাই। সমস্ত প্রকৃতি যেন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। শুধু দূর হইতে অশ্রাস্ত সমুদ্র-গর্জন নীরব প্রকৃতির বক্ষে রহস্যময় জাগরণের ভীতি জাগাইতেছিল। সহসা সমুদ্র গর্জন রূপান্তরিত হইয়া কুমারের কৰ্ণেশত শত মোহনের অবোধ্য গুঞ্জন-ধ্বনিতে পরিণত হইল। তাহার মনে হইতে লাগিল, যেন সমস্ত প্রকৃতি মোহনে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। তাহারা যেন অবোধ্য ভাষায় কুমার সাহেবকে বিদ্রুপ করিতেছে। ు* কুমার সাহেবের মানস-নয়ন দেখিতে পাইল, র্তাহার পূর্বপুরুষের সঞ্চিত অমূল্য সম্পদ যেন শত শত মোহনের হাতে হাতে অদৃশ্য হইয়া যাইতেছে। ধীরে ধীরে প্রাসাদ পার হইয়া সমুদ্রতীরে, তারপর সমুদ্রের কল্লোলিত ঢেউয়ের মাথায় মাথায় তাহার সম্পদ-গোষ্ঠী নাচিতে নাচিতে চলিয়া যাইতেছে, দূরে—বহুদূরে—দৃষ্টির বাহিরে! চারিদিকে অস্ফুট গুঞ্জন-ধ্বনি। সকলের মুখে অস্ফুট ব্যঙ্গোক্তি! অপদার্থ কুমারের গৃহলক্ষ্মী বিতাড়িত হইয়া গেল, রাখিতে পারিল না! অক্ষম, অপদার্থ কাপুরুষ নিজ প্রিয়তমা সাধবী পত্নীকে বিনা দোষে বিনা অপরাধে হত্যা করিয়া যে মহাপাপ করিয়াছিল, তাহার প্রতিশোধ গ্রহণ করিতে রাজলক্ষ্মী পুরী হইতে কঁাদিতে কাদিতে চলিয়া গেলেন। কুমার সাহেবের কর্মে অস্ফুট অবোধ্য ক্ৰন্দন-ধ্বনি প্রবেশ করিতে লাগিল। তিনি