পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারাগারে মোহন - ১৩৭ তারপর সংবাদপত্রে পূর্ণ ইতিহাস প্রকাশিত হইলে তখন ম্যাজিষ্ট্রেট ঐ একই কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, তখন মোহন বিরক্ত হইয়া উত্তর দিল, “ও ডিয়ার, ও ডিয়ার। এ সবের প্রয়োজন কোথায়? এ সব প্রশ্নের এতটুকু গুরুত্ব নেই।” ম্যাজিষ্ট্রেট কহিলেন, “গুরুত্ব নেই, তুমি কি কোরে জানলে ?” মোহন কহিল, “নিশ্চয়ই নেই, কারণ আমি বিচারের দিন আদালতে হাজির হবে না।” “আদালতে হাজির হবে না?” ম্যাজিষ্ট্রেট সবিস্ময়ে প্রশ্ন করিলেন। মোহন কহিল, “না, নিশ্চয়ই না, আমি সিদ্ধান্ত করেছি—আদালতে আমি হাজির হবো না। আমাকে এই সিদ্ধান্ত থেকে বিচ্যুত করবে, এমন শক্তি আমার জানা নেই।” মোহনের এই উদ্ধৃত ঘোষণা বাঙলার ডাক’ পত্রিকায় ও অন্যান্য কাগজে বড় বড় অক্ষরে ছাপা হইতে লাগিল। সাধারণ পাঠকেরা প্রতিদিন প্রাতঃকালে সংবাদপত্র খুলিয়া দসু মোহনের পলায়ন-কাহিনী পড়িবার জন্য আগ্রহের সহিত খুঁজিতে লাগিল। দোকানে, বাজারে, অফিসে, বাসে, ট্রামে, সকলের মুখে একই প্রশ্ন, মোহন কি পালাইয়াছে? কাহারও মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না যে, মোহন অতি সহজে পলায়ন করিতে সক্ষম হইবে; মাত্র যেদিন তাহার ইচ্ছা হইবে, সেই দিনই সে পলায়ন করিবে—গভর্নমেন্টের এমন কোন শক্তি নাই যে তাহাকে বাধা দিতে পারে। এমন যখন সাধারণের অভিমত, তখন কর্তৃপক্ষ যে নিশ্চিন্ত হইয়া বসিয়া থাকিবেন, তাহা আদৌ সম্ভবপর নহে। তাহারা সমস্যার পর সমস্যায় অভিভূত হইতে লাগিলেন। প্রথমতঃ মোহন যখন পালাইবার জন্য প্রস্তুত হইতেছে, তখন সে তাহা প্রকাশ্যে ঘোষণা করিয়া এমনভাবে সকলকে জানাইয়া তাহার পথে বিঘ্ন উৎপাদন করিবার সুযোগ দান করিল কেন? সবার উপর, মোহনের যে-পত্র ‘বাঙলার ডাক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইল, তাহাই বা কে ঐ সংবাদপত্রে প্রেরণ করিল ? কর্তৃপক্ষ পলায়নের কথা জানিতে পারিয়া যে-কৌশল জাল বিস্তার করিয়াছিলেন, সেই সংবাদ সবিস্তারে কি করিয়া সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইল, তাহাও এক সমস্যার বস্তু। যে লোক জেল হইতে পলায়ন করিবে বলিয়া জগতের সম্মুখে ঢাক পিটাইতে পারে, সে লোককে দিবা-রাত্র দৃষ্টির মধ্যে রাখা হইলেও

মন সর্বদা উদ্বেগে পরিপূর্ণ হইয়া থাকে। .2 نيس করিলেন। তাহার উপর দৃষ্টি রাখিবার জন্য ওয়ার্ডারের সংখ্যাও বৃদ্ধি ইহার পর দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হইয়া গেল। গত দুইমাস মোহন বিছানার উপর শয়ন করিয়া কাটাইয়া দিল। সে সর্বদা দেওয়ালের দিকে মুখ করিয়া শয়ন করিয়া থাকিত। কাহারও সহিত কথা কহিত না। তাহার উকিল বার বার দেখা করিতে চাহিয়া বিফল হইলেন। মোহন কাহারও সহিত দেখা করিল না। সে ওয়ার্ডারদের সহিত কথা বলা একদম বন্ধ করিল। অন্যদিকে মোহনের পলায়নের কথা সকল সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইতে লাগিল; ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ লিঙ্গম তাহাকে পুলিস-অফিসে লইয়া আসা বন্ধ করিলেন এবং এত দিন জেরা করিয়াও যখন বিশেষ কিছুই জানিতে পারিলেন না, তখন জেরা করাও একেবারে বন্ধ করিয়া দিলেন। - বিচারের একপক্ষ কাল পুর্বে সহসা মোহন সজাগ হইয়া উঠিল। সে কর্তৃপক্ষের নিকট