পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У 8 o মোহন অমনিবাস আর আমি এমন এক ব্যক্তির বিচার করতে বসেছি, যার অতীত ইতিহাস নেই। আমরা কিছুই জানি না—তুমি কে, কোথা থেকে তুমি এসেছ, তোমার বাপ-মা-ই বা কে, আর কোথায়ই বা তোমার শিশুকাল অতিবাহিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত ভাবে বলতে হ’লে, আমরা তোমার সম্বন্ধে প্রকৃতপক্ষে কিছুই জানি না। তুমি যেন হঠাৎ আকাশ থেকে নেমে এসেছ। মাত্র তিন বৎসর পূর্বে আমরা জানতে পারলুম যে, দসু মোহন নামে অতি বুদ্ধিমান, নিপুণ বৈজ্ঞানিক, অতিশয় দানশীল এবং ভীষণ চরিত্রের একজন ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে। এই সময়ের পূর্বেকার তোমার যে আনুমানিক ইতিহাস আমরা জ্ঞাত হয়েছি, তার উপর সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করা না গেলেও আমরা জেনেছি, তুমি ছয় বৎসর পূর্বে জহর নামে জাদুকর প্রোফেসার বিশ্বাসের শিষ্য হয়ে জাদু-বিদ্যা শিক্ষা করেছিলে। তারপর বিনয়কুমার অনুশীলন করেছিল। সে সময়ে তোমার গুরু স্যার ঘোষ তোমার অসামান্য মেধা ও তীক্ষ বুদ্ধি এবং বুঝবার অসাধারণ ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার পরেই কলকাতায় এক জাপানীর কাছে দেবেন্দ্র নাম গ্রহণ কোরে জুজুৎসু ও অন্যান্য কৌশল শিক্ষা করেছিলে। তারপরে তুমি মোটর সাইকেল চালনায়, মোটর চালনায়, এরোপ্লেন চালনায়, অশ্বারোহণে অশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলে। তারপর এক মোটর রেসে জিতে দশ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়ে যে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলে আর কোন ঠিকানাই তোমার পাওয়া গেল না। পরে তুমি বহু লোককে বহু অর্থ দান করেছ, বহু সাধারণ প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য অর্থ নিয়মতভাবে দিয়ে আসছ, অগ্নিদাহ, মহামারী প্রভৃতি রোগে বিপন্ন বহু জীবন রক্ষা করছে এবং ধনীর ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করেছ।” বিচারক এক মুহুর্ত নীরব থাকিয়া পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “এই গেল তোমার আনুমানিক ইতিবৃত্ত। এর পরই আমরা তোমাকে দেখতে পেলুম, তুমি সমাজের শীর্ষস্থানীয়, ধনী মহারাজা প্রভৃতি নামকরা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছ। যে সব ব্যক্তির ওপর তোমার নজর পড়েছে, তাদের কেউই নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। তোমার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, অসাধারণ মেধা, সুনিপুণ কৌশল, অপরিমিত লোকবল, প্রতৃিপদে পুলিস বিভাগকে অপদস্থ করেছে। আমি স্বীকার করতে লজ্জিত হচ্ছি না যে, তোমার মত অসাধারণ মেধাবী, অমানুষিক ব্যক্তি আমি জীবনে আর অপর একটি দেখিনি। বন্দী! তুমি কি এই অভিযোগগুলি মেনে নিচ্ছ?” ు বিচারক যখন বক্তৃতা করিতেছিলেন, তখন আসামী মুর্জিদেহে ঠেস দিয়া কাঠগড়া অবলম্বন করিয়া দাড়াইয়াছিল। তাহার হাত দুটি শ্লথভাবে দুইপাশ্বে ঝুলিতেছিল। ইতিমধ্যে মেঘ কাটিয়া যাওয়ায় আদালত-কক্ষ আলোকিত হইয়া উঠিলে সমগ্র জনতা চাহিয়া দেখিল, আসামীর গণ্ড বসিয়া গিয়াছে, চক্ষু কোটরে প্রবেশ করিয়াছে। চক্ষু রক্তবর্ণ ও গাত্রবর্ণবিবর্ণ হইয়াছে। দেখা গেল, জেলে মোহনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। মোহনের যে সুন্দর যৌবনসুলভ, মনোমুগ্ধকর প্রতিকৃতি গত কয়েক মাস ধরিয়া সংবাদপত্রে ছাপা হইতেছিল, তাহার সহিত আসামীর আদৌ সাদৃশ্য নাই। দর্শকগণের মন মোহনকে দেখিয়া বিষণ্ণ হইয়া উঠিল। বিচারক প্রশ্ন করিয়া অপেক্ষা করিতেছিলেন। কিন্তু বন্দীর কোন জবাব না পাইয়া তিনি