পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারাগারে মোহন Տ 8 Գ একেবারে অসম্ভব। এমন হওয়াও এতটুকু বিচিত্র হবে না, যদি পরে প্রকাশ পায় যে, কমিশনার সাহেবের একজন চাপরাসীর ছদ্মবেশে সে এই অফিসেই কয়েক দিন কাটিয়ে গেছে।” শ্রোতা কয়টির মুখে উদ্বেগের ছায়াপাত হইল। জেল-সুপার কহিলেন, “মোহন যে জাদুকর, তাতে কোন সন্দেহ নেই।” মিঃ বেকার কহিলেন, “গতবার যখন জেলে কুমার নিত্যবিক্রমের চুরি কেসের জন্য মোহনের সঙ্গে দেখা করি, সে গর্ব কোরে সেদিন ঘোষণা করেছিল, ‘আমি আগামী বুধবারে আপনার সঙ্গে ব্রডওয়ে হোটেলে বসে আহার করবো। যদিও আমি তার সেই দম্ভ বিশ্বাস করিনি, তবুও আমি নির্ধারিত দিনে য়ে ব্রডওয়ে হোটেল গিয়েছিলুম, তা’ স্বীকার করতে আমার লজ্জা নেই। আর এই দন্তটুকু সে বিশেষ বিবেচনা কোরেই যে করেছিল’ তা যে একান্ত অর্থহীন নয়, আমি এখন বেশ পবিষ্কার বুঝতে পারছি।” কমিশনার কহিলেন, “বুঝিয়ে বলুন, মিঃ বেকার!” মিঃ বেকার মৃদু হাস্যে কহিলেন, “ওটা তার একটা ভীষণ চাল, স্যার। কারণ আমি যখন দেখলুম যে, মোহন বৃথা দম্ভ করেছিল, তার প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেনি, তখন আমার মনে স্বতঃই এই চিন্তা উদয় হয়েছিল যে, মোহনের দ্বিতীয় দন্তপূর্ণ ঘোষণা যে, সে বিচারের সময় আদালতে উপস্থিত হবে না, তাও একটা মিথ্যা দম্ভ। ফলে তার কথা আমি বিশেষ গুরুতরভাবে নিতে পারিনি। সত্য কথা বলতে কি, আমি তাকে উপেক্ষা করেছিলাম এবং আমি তার ভ্যানে পূর্বের মত পুলিস অফিসে প্রত্যহ যাতায়াত বন্ধ কোরে অন্য ডিটেকটিভের হাতে সে ভার অপর্ণ করেছিলাম।” মিঃ বেকারের এই স্বীকারোক্তি কাহারও মনে তাঁহার সম্বন্ধে হীন ধারণা অঙ্কিত করিল না। উপরন্তু দসু মোহনের অসমসাহসিক কার্যকলাপের চিন্তায় সকলের মন ভারাক্রান্ত হইয়া উঠিল। পুলিস কমিশনার বিষগ্ন স্বরে কহিলেন, “এখন আমাদের কর্তব্য কী? জনসাধারণ যে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে—দসু্য তস্করের বিরুদ্ধে যে স্বাভাবিক ঘৃণা মানুষের মনে সঞ্জাত হয়, দসু মোহনের ক্ষেত্রে তার বিপরীত কার্য করছে। এও এক বিষম বিপদ।" মিঃ বেকার কহিলেন, “তার একমাত্র কারণ, মোহন দরিদ্রের বন্ধু। যেখানে অভাব, শোক, দারিদ্র, সেখানেই দস্য মোহনের মঙ্গল হস্তের আবির্ভাব দেখা যায়। মোহনের বিদ্রোহ ধনী-সম্প্রদায়ের, রাজা-মহারাজা-সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এক কথায়, সে অভিজাত সমাজের ভীষণ শত্রু। এমন একটা ঘটনাও আমাদের দৃষ্টিতে আসেনি, যে-ক্ষেত্রে মোহন কোন দরিদ্রের কোন অনিষ্ট করেছে। অবিবাহিত, অতি সুঠাম আকৃতি-সম্পন্ন যুবক দেশের জনসাধারণের চিত্ত জয় করেছে এবং অন্যান্য কারণের মধ্যে এটাও একটা শ্রেষ্ঠ কারণ যে, কেন আমরা মোহনের কোন ঠিকানা পাই না। আমার সন্দেহ হয় যে অনেকে তাকে বাড়ীতে আশ্রয় দেয়, দিনের পর দিন তার সেবা কোরে নিজেকে কৃতাৰ্থ ভাবে, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে। আর এরূপ সন্দেহভাজন ব্যক্তি আমার নজরে এসেছে।” কমিশনারের মন মোহনের প্রশংসায় তিক্ত হইয়া উঠিল। তিনি ঘড়ির দিকে চাহিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন; কহিলেন, “আজ সন্ধ্যার পর আপনি আমার সঙ্গে দেখা করবেন, তখন নীলকমলের সম্বন্ধে আদেশ জানাবো।” .سي.r--