পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Տ Փ Հ মোহন অমনিবাস যদি আপনি জানতেন, তা হলে আমার মুখের ও চোখের, পরিবর্তন করা কত সহজ তা ভেবেই শুধু আশ্চর্য হতেন—আমাকে দেখে হতেন না। গত দু'মাস ধোরে নির্জন সেলে বদ্ধ থেকে আমি ধীরে ধীরে নিজেকে রূপান্তরিত করেছিলাম—আমার এই পরিবর্তনের গতি এত ধীরে ধীরে হয়েছিল যে, ওয়ার্ডারগণের নজরে পড়েনি। এবার বুঝেছেন মিঃ বেকার?” মিঃ বেকারের সন্দেহ গেল না। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিন্তু নীলকমল দে’র কাহিনী?” - “ওঃ, নীলকমল দে? সত্যই একজন নীলকমল আছে। সে অত্যন্ত দরিদ্র, ভিক্ষাবৃত্তিই তার জীবন-ধারণের একমাত্র পেশা। বছর তিন আগে, অর্থাৎ আমার আবির্ভাবের পূর্বক্ষণে তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার চেহারা আমার চেহারার সঙ্গে এমন সাদৃশ্য আছে যে, পাছে আমি বার বার গ্রেপ্তার হই অর্থাৎ ভ্রম বশতঃ তাকেই আপনারা গ্রেফতার করেন এবং শাস্তি দেন, এই ভয়ে তাকে আমি এমন এক নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে বাধ্য হই যে, সেখান থেকে সে আর কারুর নজরেই আসবে না এবং আমি ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যের সাদৃশ্যটুকু আমার দেহ হতে লোপ করি। সেই নীলকমলকে আমার বন্ধুরা যোগাযোগ কোরে আপনাদের ৫ আইন ভঙ্গ করায় ও কৌশলে একরাত্রি হাজত-বাস করায় এবং হিসাব কোরে তাকে হাজত থেকে এমন এক সময়ে মুক্ত করে, যে সময়ে আমিও পুলিস অফিস থেকে বার হয়ে জেলের গাড়ীতে উঠি। এসবের প্রয়োজন হয়, এইজন্যে যে, চরম প্রয়োজনের সময় আপনাদের এমন একটা বিশ্বাস জন্মানো, যাতে আপনারা ভাবতে বাধ্য হন, হয়তো সেই সময়েই আমি পলায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আর হয়েছিলও তাই— না, মিঃ বেকার ?” মোহন কহিতে লাগিল, “নীলকমলকে এই প্ল্যানের মধ্যে আনা সবচেয়ে বড়ো প্রয়োজন হয়েছিল। যদি তা’ না হতো, আমি কে—আপনারা জানতে চাইতেন। তা’ হ’লেই আমার সব মতলব ফাস হয়ে যেতো। আপনারা অনুসন্ধানের মুখে দেখতে পেলেন, এক নীলকমল ভিখারী—সে ঠিক ওই সময়েই পুলিস হাজত থেকে বার হয়েছিল, আর আমিও নিজেকে নীলকমল বোলে পরিচয় দিলুম, সুতরাং এই বদলকার্য সুচারুরূপে সুসম্পন্ন হল। কেমন— তাই না, মিঃ বেকার ?” (* মিঃ বেকার মাথা দোলাইয়া কহিলেন, “হা, হাঁ, তোমার কথাইঠিক।” মোহন দৃপ্ত মুখে কহিল, “আগের কথা মনে করুন। আমি যখন দম্ভ কোরে ঘোষণা করলুম যে, আমি বিচারের সময় আদালতে হাজির হবে না, তখন আপনারা ব্যতীত ভারতের সমস্ত নর-নারী বিশ্বাস করেছিল, আমি নিশ্চয়ই পলায়ন করবো কিন্তু আপনারা ভাবলেন, আমি বৃথা দম্ভ প্রকাশ করছি। আপনারা আরো ভাবলেন, কুমার নিত্যবিক্রমের কেসে সফল হয়েছি বোলে আমি শক্তিগর্বে আত্মহারা হয়ে পড়েছি। কিন্তু আপনারা একবারও চিন্তা করলেন না যে, দসু মোহন এমন মিথ্যা অহঙ্কার করে না। যখন সে বলে, সে পালাবে, তখন নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে, এমন কোন সুযোগ আছে, যার বলেই সে এমন প্রকাশ্য দম্ভ করে। আপনারা কি ভাবলেন, না ভাবলেন, আমার কিছুই এসে গেল না—কিন্তু ভারতের নর-নারীর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো যে, আমি পলায়ন করবো। একেই বলে বিশ্বাসের শক্তি। দ্বিধাহীন, সন্দেহহীন নির্মল বিশ্বাস। মোহন পলায়ন করবে, সে