পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

እ Œ © মোহন অমনিবাস মহিলাটি পুনরায় বললেন, চীফ জাস্টিস স্যার ভেলমন্ট ছুটিতে গেলে তুমিই তো তার জায়গায় এ্যাকটিং করবে ?” - ভদ্রলোকের মুখে গর্বভাব ফুটে উঠল। তিনি বললেন, “শুনেছি, গভর্নমেন্ট তাই স্থির করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আদেশ আসেনি।” মহিলাটি বললেন, “আদেশ এলেই আমাকে তার কোরে জানাবে, বুঝেছ? তুমি যা ভোলা মানুষ। কি কোরে হাইকোর্টে যে জজিয়তি করো, জানিনে!” ভদ্রলোক অতিমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে নিম্নস্বরে বললেন, “চুপ, চুপ। ঐ ভদ্রলোক শুনতে পেলে কি ভাববে, ছিঃ! আচ্ছা, তা’ হ’লে আমি আসি ? খুব সাবধানে যেও।” ভদ্রলোক স্ত্রীর দিকে বারবার চাইতে চাইতে চলে গেলেন। প্ল্যাটফরমের অনতিদূরে দুজন পুলিস কনস্টেবল দাঁড়িয়েছিল, তারাও ভদ্রলোকের সঙ্গে চলে গেল। ভদ্রলোক হাইকোর্টের একজন জজ। জজের স্ত্রী আধুনিকা, শিক্ষিতা তরুণী একাকী প্রথম শ্রেণীতে এলাহাবাদ চলেছে। অবশ্য দিনমানের ভ্রমণ। তা হলেও কয়েক বছর পূর্বে এই বাঙালী মহিলারাই অসূর্যস্পশ্যা হয়ে বাড়ীর মধ্যে থেকেও লজ্জা নিবারণ করতে পবন ও তপন দেবের সঙ্গে অসহযোগ করতেন। আর এখন ? সে কথা থাক। এখন যা বলছি। অল্প কয়েক মুহুর্ত পরে গার্ড বংশী-ধ্বনি করলেন। মেল ট্রেন ছেড়ে দিল। এমন সময়ে রেলওয়ে কর্মচারীদের বাধা উপেক্ষা কোরে একজন ভদ্রলোক হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে আমাদের কামরায় লাফিয়ে উঠলো। আমার সহযাত্ৰিণী মহিলা র্তার জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছিলেন, এই অপ্রত্যাশিত ব্যাপারে আগন্তুকের মুখের দিকে চেয়ে একটা অস্ফুট ভয়ার্ত ধ্বনি করো সীটের ওপর বসে পড়লেন। - আমি কাপুরুষ নই, দুর্বল নই, বরং বহু কিছুই। আমি স্বীকার করছি, শেষ মুহুর্তে এমন বিরক্ত হয়ে ওঠে। আমার মনে হয়, এরূপ ব্যবহার অতিমাত্রায় রূঢ় ও অসভ্যতার পরিচায়ক। বিশেষ করে যে সব রেলের কামরায় মহিলারা ভ্রমণ করেন, সে সব কামরায় এমন কোরে প্রবেশ করার পেছনে প্রায়ই কোন অব্যক্ত কারণ থাকে, এই আমার দৃঢ় ধারণা। আগন্তুকের চেহারা ও বেশভূষা প্রথম দৃষ্টিতে ভদ্র বোলেই ধারণা হয় একমাত্র এই কারণেই ভদ্রলোকের এরূপ অবস্থায় আগমনের মন্দ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমার মনে কোন বেশভূষার পরিপাট্য সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সুন্দর রঙিন টাই, উত্তম ছাঁটের কোট, এমন কি হাতের দস্তানাটি পর্যন্ত তার আভিজাত্যের পরিচয় দিচ্ছিল। সে যে অশেষ শক্তিমান, তা তার মুখে দেখে অনুমান করা শক্ত ছিল না। -- তার মুখ দেখে আমার বারবার মনে হচ্ছিল, এ-মুখ আমি চিনি, এ-মুখ নিশ্চয়ই আমি কোথাও দেখেছি, এ-মুখ আমার পরিচিত। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও আমি স্মরণ করতে পারলুম না যে, কোথায় ও কিভাবে এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। আমি বারবার আমার স্মৃতিভাণ্ডার তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করে দেখলুম, কিন্তু সফল হ’লাম না। এমনও অনেক সময় অনেকের নিকট হয় যে, কোন লোকের ছবি বারবার সংবাদপত্রে দেখেও যখন সে লোককে সম্মুখে দেখে তার মনে হয়, এই লোকের সঙ্গে