পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У a o মোহন অমনিবাস গোয়েন্দার সাধ্য নেই যে দসু মোহনকে বাধা দিতে পারে। আজ অদৃষ্টের পরিহাস বেশ ভালভাবেই অনুভব করলুম। কারণ দসু মোহন চলেছে, দসু মোহনকে গ্রেফতার করতে। আমার মন জজ-গৃহিণীর জন্য কৃতজ্ঞতায় ভয়ে উঠল। এই নারী জাতটাকে কিছুদিন পূর্বেও যে কি ঘৃণা করতুম, তা’ আজ মনে হ’লে ঘৃণায় মরে যাই। আমার সমস্ত পুঞ্জীভূত ঘৃণাকে রমা সুধা-ধারায় রূপান্তরিত কোরে দিয়েছে। সেই রমার জন্য মাদ্রাজ থেকে আকুল হয়ে ছুটে এসে এই যে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলুম, তা থেকে যে এমন সহজে উদ্ধার পাবো, ভাবতেও পারিনি। কিন্তু আমার বন্ধু-মহিলাটির করুণায় তাও সম্ভব হয়েছে। -- রমা! রমা রমা নামেও যে মধুর আস্বাদ আমার প্রাণ ও মন মাতাল কোরে তুলেছে, সেই বাঞ্ছিতা দেবীকে লাভ করবার সৌভাগ্য কি আমার হবে কখনও? রমা কি আমাকে ভাগ্যবান করবে? আমি দস্য, আমি তস্কর, আমি নর-নারীর ত্রাস দানব। এমন লোককে রমার মত দেবী কি কখনও আত্মসমপণ করতে পারে ? রেঙ্গুন জাহাজের কয়টি দিন আমার জীবনে পরম দিন, বোলেই বেঁচে থাকবে। সে দিন কয়টির অনুভূতি, স্মৃতিকে নিয়ে আমি আজও বেঁচে আছি, আজও আমার হাত নররক্তে কলঙ্কিত হয়নি। নইলে সাধ্য কি ছিল বেকারের আমাকে গ্রেফতার করতে? অন্য সময় হলে আমি খুন করতেও দ্বিধা করতাম না। কিন্তু রমা—রমাই আমার জীবনের গতি ফিরিয়ে দিয়েছে। - এমন সময়ে একজন ডিটেকটিভ চিৎকার কোরে বললেন, “বাঁ দিকে চলুন।” আমি দ্রুতবেগে মোটরের গতি কমিয়ে দিয়ে মোড় ঘুরলুম। পরে পিছন দিকে ঈষৎ ঘাড় বাকিয়ে ধন্যবাদ দিলুম। - আমি ভাবলুম, এই দুজন আইনের প্রতিনিধির সাহায্য আমি যদি না পেতাম, তাহলে আমার এতক্ষণে কি দশা ঘটতো? আমাকে সন্দেহ করে যদি কলকাতায় টেলিগ্রাম কোরে । মিঃ বেকারকে এরা আনাতো, তা হলে আজ আমার মন এই আনন্দে পূর্ণ হবার অবকাশ পেতো কী? আমি মনে মনে ডিটেকটিভ দুজনের দীর্ঘ পরমায়ু ও উন্নতি কামনা করলুম। কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকী। প্রথমে এদের সাহায্যে দৃস্টাকে গ্রেফতার করতে হবে। পরে আমার কাগজ-পত্র এদের অজ্ঞাতসারে পকেটে পুরুতে হবে। আমি কোন ক্রমেই দুজন ডিটেকটিভকে আমার পকেট-বুকে কি আছে, দেখতে দিতে পারি না। কিছুতেই না। তা হলে আমার সকল আশা, শ্রম পণ্ড হবে। আমার চিন্তা হ’ল, কি উপায়ে এদের দুজনের সাহায্যও নেওয়া যায়, আবার এক-একাও স্বাধীনভাবে কাজটুকু শেষ করা যায়। কিন্তু সে রকম হওয়া একরূপ অসম্ভব বোলেই আমার ধারণা হ’ল। আমরা যখন প্রয়াগ স্টেশনে উপস্থিত হলুম, তখন যে লোকাল ট্রেন ধরবার জন্য ঘণ্টায় আমরা প্রায় ৫০ মাইল বেগে ছুটে আসছিলাম, সেই ট্রেন মাত্র দুই মিনিট পূর্বে স্টেশন ত্যাগ কোরে গেছে। অনুসন্ধানে এও জানা গেল যে একজন ধূসর বর্ণের ওভারকোট গায়ে ভদ্রলোক সেই গাড়ীতে দ্বিতীয় শ্রেণীর আরোহী হয়ে গমন করছেন। আমার অনুমান সত্য হ’ল দেখে আনন্দও যত হ’ল, এই ভেবে দুঃখও তত হ’ল যে,