পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা ১৭৩ অনেক সময় হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হচ্ছিল। বহুক্ষণ পরে আমি এমন এক স্থানে উপস্থিত হলুম, যেখানে আর অগ্রসর হবার কোন পথ নেই। স্থানটি ভিজা, কর্দমাক্ত। আমি মাটির ওপর দৃষ্টি ফেলতেই জুতার দাগ দেখতে পেয়ে এই ভেবে নিঃসন্দেহ হলুম যে, আমি ঠিক পথেই চলেছি। আমি তখন পদ-চিহ্ন লক্ষ্য কোরে বামদিকে অগ্রসর হতে লাগলুম। কিছু দূর গিয়ে অদূরে একটা ভাঙ্গা দালান দেখতে পেয়ে ঝোপের মধ্যে আত্মগোপন করে ভাবলুম, দসু্যু নিশ্চয়ই ভাঙ্গা দালান-বাড়ী নিরাপদ ভেবে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। আমি কিছু সময় দসুর গতিবিধি জানবার জন্য নীরবে অপেক্ষা কোরে রইলুম। কিন্তু কোন দিকেই কোন শব্দ শুনতে না পেয়ে অতি ধীরে ধীরে হামাগুড়ি দিতে দিতে অগ্রসর হতে লাগলুম। সে এক ভীষণ উত্তেজক মুহুর্ত। আমি বিশেষরূপে অবগত ছিলুম, দসু্য সশস্ত্র এবং সে যে মরিয়া হয়ে এবার আক্রমণ করবে, সে বিষয়েও আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। এরূপ পরিস্থিতিতে খুব সাবধানে এবং বিবেচনা সহকারে কাজ না করলে যে বিফল হতে হবে, তা’ আমার বিশেষরূপেই জানা ছিল। সবার উপর বাইরে দুজন আইনের প্রতিনিধি দসু মোহনকে গ্রেফতার করবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে অপেক্ষা করছে। আমাকে নিঃশব্দে কার্য উদ্ধার কোরে নিঃশব্দে সরে পড়তে হবে। সময় অল্প, কিন্তু দায়িত্ব কি ভয়ঙ্কর ভেবে...সত্য বলতে কি, আমার মন নিরুৎসাহ হয়ে উঠল। জীবনে অনেক সময় অনেক বিপদে পড়েছি। কিন্তু বিপদ এক জিনিস, আর সমস্যা অন্য। বিপদের সময় মানুষ মরিয়া হয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে, কিন্তু সমস্যা সমাধানে যে স্থির ও শান্ত মস্তিষ্ক আবশ্যক, বর্তমান ক্ষেত্রে আমার তারই একান্ত অভাব ছিল। তারপর ইতিমধ্যে মোগলসরাই থেকে যে ভদ্রলোক আমার ছদ্মবেশ সত্ত্বেও আমাকে চিনতে পেরেছিল, সে-ও খুব সম্ভবত পুলিস-কমিশনারের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। কে বলতে পারে যে, কমিশনারের মুখে আমার ইতিহাস ও বর্ণনা শুনে এবং যদি জজসাহেবও তার পত্নীর বার্তা অবগত হয়ে ছুটে এসে থাকেন এবং আমার বন্ধুত্ব একেবারে অস্বীকার করেন (তা করা ছাড়া তাঁর আর কি করবার আছে?) এবং এই উভয়বিধ ঘটনার সংমিশ্রণ যে ফল ফলবার একবার সম্ভাবনা, তারই জের নিয়ে কমিশনার সাহেব দলবল সমেত আমাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা কোরে থাকেন,তবে আমার অবস্থাটা কি দাঁড়াবে, ভেবে আমার সমস্ত বুদ্ধি ও শক্তি লয় পাবার উপক্রম করলো। যে দসু মোহন ইহার অপেক্ষা শতগুণে বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হয়েও একটা তুচ্ছ পিপীলিকা-সম জেল কয়েদী ছিচকে চোর যে এমনভাবে অপদস্থ ও সমস্যায় জড়িত করিতে সক্ষম হবে, কখনও কি স্বপ্নেও কল্পনা করেছি আমি ?” আমার মাথায় এই সব চিন্তা মুহুর্তের ভিতর বায়স্কোপের ছবির মত উদয় হয়ে বিদ্যুৎগতিতে লয় পেতে আরম্ভ করলে। আমি হামাগুড়ি দিয়ে আরও কিছু দূর অগ্রসর হতেই একটা শব্দ শুনতে পেলুম। আমার মন আনন্দে নৃত্য কোরে উঠল। আমি ধীরে