পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ֆ Գ Ե- মোহন অমনিবাস দিকে অপলক দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিলেন। যে অপূর্ব দ্যুতি হীরকখণ্ডগুলি হইতে বিচ্ছুরিত হইয়া পড়িতেছিল, তাহা চক্ষে না দেখিলে কল্পনায় ধারণা করা শক্ত। পূর্ব আয়োজনমত লেভী হোর ভোজের পর রাত্রি দশটার সময় জমিদার প্রাসাদ ত্যাগ করিয়া গেলেন। নিমন্ত্রিত মহিলারাও যে যাহার বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করিলেন। যে তোমাকে পেয়ে কত সুখী বীণা, তা প্রকাশ করবার ভাষা আমার নেই।” । বীণা আয়ত, উজ্জ্বল, হাস্যভরা দুটি চক্ষু স্বামীর মুখের উপর পাতিয়া কহিল, “আজ আবার এই নুতন কথা কেন, বলতো?” - স্বামীর একখানি হাত বীণা ক্রোড়ের উপর তুলিয়া লইল। কুমার দগ্ধ নেত্ৰে চাহিয়া কহিলেন, “আমার দুঃখ এই বীণা, তোমাকে আমি যেভাবে রাখতে চাই, তেমন সুখে রাখতে পারি না। চারিদিকে অভাব, চারিদিকে অনটন। আমার মনের ইচ্ছা মনেই রয়ে গেল।” বীণা সপ্রেম দৃষ্টিতে চাহিয়া কহিল, “কেন বলতো,মিথ্যে মিথ্যে তুমি ওসব ভেবে কষ্ট পাও? আমার মত সৌভাগ্যবতী নারী পৃথিবীতে আর একটিও নেই। তোমার এমন অফুরন্ত ভালবাসা যে নারীর ভাগ্যে সম্ভব হয়েছে, তার জন্য কল্পিত দুঃখ করতে তোমার দুঃখ হয় না?” * বীণা দুটি সুকোমল বাহুলতা দিয়া স্বামীর কণ্ঠদেশ আবদ্ধ করিল। সহসা তাহার হীরক বলয় দুটির কথা স্মরণ হইল। সে স্বামীর কণ্ঠদেশ বাহুমুক্ত করিয়া অতি সন্তপর্ণে বলয় দুটি হাত হইতে খুলিয়া কহিল, “আগে এদের তুলে রেখে এসো। এখন ভালয় ভালয় ব্যাঙ্কে রেখে আসতে পারলে নিশ্চিন্ত হই।” কুমার পত্নীর হাত হইতে বলয় দুটি লইয়া এরূপ মুগ্ধ চোখে দেখিতে লাগিলেন, যেন তিনি এমন বস্তু পূর্বে কখনও দেখেন নাই। কহিলেন, “আমাদের সব অভাব, সব অপ্রাচুর্যের মধ্যেও এমন দুটি মহামূল্য জিনিসের অধিকারী যে ঈশ্বর করেছেন, খুব আশ্চর্যের বিষয় নয় কী, বীণা ?” . . శ్రి বীণা কহিল, “তোমাকে কি তিনি অসুখী করতে পারেন? যাঁর মন এমন উদার, যিনি এমন মহৎ, যার তুলনা নেই, এমন হৃদয়বান মহাপুরুষের নিকট যদি এমন বস্তু গচ্ছিত না রাখেন, তবে তার সৃষ্টির ব্যতিক্রম হবে যে।” সে শিক্ষিতা তরুণী বীণার মুখের দিকে কয়েক মুহুর্ত চাহিয়া থাকিয়া কুমার পাশ্বের গুপ্ত কক্ষে প্রবেশ করিলেন এবং একটি বৃহৎ মর্মর টেবিলের ড্রয়ার টানিয়া তাহার মধ্যে কঙ্কণ দুইটি স্থাপন করিয়া উপরে কাগজ চাপা দিলেন। পরে ড্রয়ার বন্ধ করিয়া শয়ন-কক্ষে আগমন করিলেন। যে-গৃহে হীরক বলয় রক্ষিত হইল, তাহার মধ্যে যাইবার মাত্র একটি দ্বার—তাহাও শয়ন-কক্ষের ভিতর দিয়া। সুতরাং দ্বারে চাবি বন্ধ করিবার প্রয়োজন ছিল না। শয়ন-কক্ষের দ্বার অগলবদ্ধ করিয়া দিয়া উভয়ে শয়ন করিলেন এবং অনতিবিলম্বে নিদ্রিত হইয়া পড়িলেন। -