পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা פי"ל כי ছিল। সুতরাং চোরের পক্ষে একবার খিল খুলিয়া পরে আবার খিল দিয়া জানালা দিয়া বাহির হইয়া যাওয়া সম্ভব নহে। সুতরাং জানালার ভিতর দিয়া চোর প্রবেশ করে নাই। অন্যদিকে কুমার বলিতেছেন, দৃঢ়ভাবে বলিতেছেন যে, তিনি যখন শয়ন-কক্ষের দ্বার মুক্ত করিয়াছিলেন, তখন দ্বার অর্গলবন্ধ ছিল। তবেই কোন চোরের পক্ষে দ্বারে খিল লাগাইয়া মীরার সম্বন্ধেও বিশেষভাবে পুলিস অনুসন্ধান করিল। কিন্তু তাহার অতীত জীবনের এমন কোন ঘটনার চিহ্ন পাওয়া গেল না, যাহাতে তাহাকে সন্দেহ করা যাইতে পারে। হতভাগিনী তরুণী স্বামী-সুখে বঞ্চিতা হইয়া সহপাঠিনী বীণার নিকট আশ্রয় পাইয়াছিল সত্য, কিন্তু একটা দিনের জন্যও তাহার কোন বিষয়ে বিন্দুমাত্র অসংযম কেহ লক্ষ্য করে নাই। সুতরাং মীরা গুপ্ত সন্দেহের অতীত। তাহা হইলে হীরক-বলয়ের কি হইল? পুলিস কমিশনার তাহার নিপুণ কর্মচারীদের অভিমত শ্রবণ করিয়া সন্দেহ করিলেন যে, কুমার নরনারায়ণ অভাব, ঋণ ও নিয়মিত খাজনা অনাদায়ের দরুণ চারিদিকে ঋণে আবদ্ধ হইয়া পড়ায় চুরির অজুহাত দেখাইয়া গোপনে হীরক বলয় বিক্রয় করিয়া ফেলিয়াছেন। কারণ প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক বস্তু যদি প্রকাশ্যে বিক্রয় করেন, তবে তাহার দৈন্য-দশা প্রকাশিত হইবার সম্ভাবনা থাকায় এইরূপ করিতে বাধ্য হইয়াছেন। সুতরাং ধীরে ধীরে পুলিসের হস্ত এই ঘটনা হইতে মুক্ত হইয়া গেল। কিন্তু হীরক-বলয় অপহৃত হইবার পর এবং তাহার পুনরুদ্ধারের কোন সম্ভাবনা রহিত হওয়ায় কুমারের সত্যকার দুদিন আরম্ভ হইল। তাহার বাজারে ধার পাওয়া বন্ধ হইয়া গেল। ব্যাঙ্ক আর অগ্রিম টাকা দিতে অস্বীকার করিল, মহাজন উচ্চ সুদেও আর ঋণ দিতে চাহিল না। পাওনাদারেরা একযোগে তাহাদের অর্থের জন্য আদালতে নালিশ রজু করিয়া দিল। কুমার বুঝিলেন, হীরক-বলয় তাহাদের কি মহান সম্পত্তি না ছিল! সহসা ভগবান মুখ তুলিয়া চাহিলেন! কুমারের এক দূর-সম্পকীয় আত্মীয়ের মৃত্যু হওয়ায় এবং মৃতের কোনও নিকট আত্মীয় উত্তরাধিকারী না থাকায় কুমার প্রভুত সম্পদের অধিকারী হইলেন। এ-যাত্রা তাহারা রক্ষা পাইলেন। ...so কিন্তু তাহদের যে গর্ব ছিল, হীরক-বলয় চুরি হওয়ায় তাহদের স্ত্ৰে গৈ দর গ্রেগর্বের বস্তু চিরতরে চলিয়া গেল। পূর্বে কত বড়লোকের বিখ্যাত নরনারীর পদধূলি তাঁহাদের বাড়ীতে হীরক বলয়ের প্রাসাদে অযাচিত ভাবে পড়িত, সে পথ চিরতরে রুদ্ধ হইয়া গেল। গহনা স্ত্রীজাতির অত্যন্ত প্রিয় বস্তু। উপরন্তু হীরক-বলয়ের মতন অলঙ্কারের শোক সহ্য করা কোন নারীর পক্ষেই সম্ভব নহে। বীণার সমস্ত ক্রোধ মীরার উপর পড়িল। ফলে সে মীরাকে তাহার আশ্রয় হইতে স্বামীর মৃদু প্রতিবাদ সত্ত্বেও তাড়াইয়া দিল। বীণার মনে কেন যে ধারণা জন্মিয়াছিল, হীরক-বলয়ের অদৃশ্য হওয়ায় সহিত মীরার সংস্রব আছে, তাহার হেতু সে আপনিও বুঝিত না। কুমার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রভুত অর্থ প্রাপ্তির পর স্ত্রীর মনের বেদনা অপহরণের জন্য সস্ত্রীক তীর্থস্থান পর্যটন করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। কয়েক মাস এইরূপে ভ্রমণ করিয়া বীণার মন অপেক্ষাকৃত সুস্থ হইয়া উঠিলে কুমার স্ত্রীকে লইয়া প্রাসাদে প্রত্যাবর্তন করিলেন।