পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা Տ Ե (: জমিদার-প্রাসাদে হইয়াছিল। কুমারের একমাত্র কন্যাসন্তান কণিকার প্রথম পুত্রের অন্নপ্রাশন। কুমার মুক্ত হস্তে ব্যয় করিতেছিলেন। কণিকার মাতা এই উপলক্ষে তাহার আত্মীয়স্বজনকে নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে র্তাহার শিক্ষিতা তরুণী কনিষ্ঠা ভাগিনেয়ী কুমারী রমা অন্যতমা। কুমারী রমার সহিত আমরা পরিচিত। ছদ্মবেশী দস্য মোহনের সহিত একই জাহাজে রেঙ্গুন যাইবার সময় রমা মোহনকে দস্যু বলিয়া না চিনিয়া উভয়ের মধ্যে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হইয়াছিল, তাহা আমরা জানি। আমার আরও জানি যে, মাদ্রাজের জেল হতে পলায়ন করিয়া দসু মোহন কুমারী রমার সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য এলাহাবাদ যাইবার পথে ঘটনা চক্রে পড়িয়া বিফল মনোরথ হইয়াছিল। যাহা হউক, আমাদের গল্প এখন আরম্ভ করি। উৎসব শেষ হইয়া গিয়াছে। বহু আত্মীয়-কুটুম্ব চলিয়া গিয়াছেন। যাহারা আগামী কল্য যাইবেন বলিয়া রহিয়াছেন, তাহারা কুমারের প্রশস্ত ড্রইংরুমে বসিয়া সন্ধ্যার পর আলাপ আলোচনা করিয়া সময় কাটাইতেছিলেন। কুমারের এক দূর-সম্পকীয় আত্মীয় তাহার পুত্রকে নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে পাঠাইয়াছিলেন। এই সুশ্রী, সুবেশ, অতি সুঠাম অবয়ব বিশিষ্ট যুবককে ইতিপূর্বে না কুমার, না তাহার পত্নী কেহই দেখিয়াছিলেন। তাহারা অতি সমাদরে এই ধনী-পুত্রের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়াছিলেন। - নানা বিষয়ে আলোচনা চলিতেছিল। এক সময়ে অপহৃত হীরক-বলয়ের কাহিনী উঠিয়া পড়িল। একজন আত্মীয় বলিলেন, “যে রহস্যের পুলিস পর্যন্ত কিনারা করতে পারেনি, সে-রহস্য সম্বন্ধে আমাদের পরস্পরের অভিমত প্রকাশ করি, আসুন। এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল, অথচ তার কিছুই জানা গেল না, এরূপ অসামান্য সমস্যার আলোচনায় আমাদের সময় কাটবে ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয়ও দেওয়া হবে।” ইহা শুনিয়া সকলেই সম্মত হইলেন। ড্রইংরুমে কুমার, বীণা, রমা, আত্মীয়-পুত্র তপন এবং আরো চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তপন ও রমা পাশাপাশি দুখানা কোঁচে বসিয়া আলাপ করিতেছিল। রমা বারবার সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে যুবকের দিকে চাহিয়া ভাবিতেছিল, যে সন্দেহ তাহার মনে গত দুইদিন ধরিয়া বাসা বধিয়াছে সে সন্দেহের মূলে কোন সত্য আছে কিনা। কিন্তু কি এক অজ্ঞাত কারণে সে সন্দেহের বিষ মন হইতে তাড়াইবার জন্যও কম বেগ পাইতেছিল না। ് প্রত্যেকে আপন আপন অভিমত প্রকাশ করিতে লাগিলেন। কিন্তু কাহারও অভিমত কাহারও সহিত মিলিল না। উপরন্তু সে-সব এরূপ অসম্ভব ও কষ্টকল্পিত যে কাহারও মনে কিছুমাত্র দাগ কাটিতে পারিল না। সকলের অভিমত প্রকাশ করিবার পর বীণা দেবী তপনের নির্বাক মুখের দিকে চাহিয়া দেখিল, সে রমার নত মুখের দিকে চাহিয়া কিছু চিন্তা করিতেছে। বীণা তপনের মনোযোগ আকর্ষণ করিয়া কহিল, “আপনি কিছু বলুন, তপনবাবু!” তপন শান্ত কণ্ঠে কহিল, “আমাকে মাপ করবেন। আমার কোন অভিমত নেই।” তপনের কথা শুনিয়া সকলে সমস্বরে প্রতিবাদ করিয়া উঠিলেন। কারণ গত দুই দিন