পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 ο মোহন অমনিবাস উঠলাম! আপনার জন্য উপস্থিত দুজন সেপাই পাহারার বন্দোবস্ত করছি। পরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করা যাবে।” পুলিস-সাহেব বাহির হইয়া গেলেন। জমিদার মহাশয় কহিলেন, “এ আবার কি নতুন ফ্যাসাদ দেখো?” বিজন রায় কহিল, “আপনি চিন্তিত হবেন না। আমি দসটাকে শায়েস্তা কোরে দিচ্ছি!” কোন পথ দিয়া যে দসু মোহনের পত্রের কথা সাধারণ্যে প্রকাশিত হইয়া পড়িল, তাহা জানা গেল না। যাহারা প্রবল প্রতাপান্বিত জমিদারের বিরুদ্ধে কিছু করিতে সক্ষম না হইয়া তরুণ-সম্প্রদায় আদালত অবধি ছুটিয়া বিফল মনোরথ হইয়া নূতন পথের সন্ধান করিতেছিল;তাহারাও পত্রের কথা জানিতে পারিয়া মহানন্দে একটা সভা আহান করিয়া বসিল। সভায় যদিও কোন কার্যকরী প্রস্তাব পাশ হইল না, তবুও বক্তার পর বক্তা উঠিয়া ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানাইতে লাগিল। তাহারা প্রকাশ্যে স্পষ্ট করিয়া দসু মোহনকে কৃতজ্ঞতা কিম্বা ধন্যবাদ জানাইতে পারিল না, কারণ যে দসু্যকে গ্রেপ্তার করিবার জন্য গভর্নমেন্ট দশহাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করিয়াছেন, সেই ব্যক্তিকে সমর্থন করিলে কিম্বা তাহাকে ধন্যবাদ দিলে আইনতঃ অপরাধী হইবার সম্ভাবনা ছিল বলিয়া তাহাদিগকে সাবধান হইতে হইল। কিন্তু তাহাতে কি আসিয়া যায়? ক্ষুধার সময় আহার্য কে আনিল বা বিপদের সময় সাহায্য কে করিল, জানিবার প্রয়োজন একান্ত অপরিহার্য নহে। তরুণের বোস কি জয়’ ধ্বনি করিতে করিতে সারা গ্রাম প্রদক্ষিণ করিয়া, যাহারা তখনও এই পত্রের কথা শোনে নাই, তাহাদের শোনাইয়া বেড়াইতে লাগিল। এই সংবাদ অন্যান্য সকলের সহিত কন্যার পিতা আশুতোষ বাবু শ্রবণ করিলেন। তিনি উর্ধ্বশ্বাসে মুক্তকচ্ছ হইয়া ভাবী রাজ-জামাতার নিকট ছুটিয়া আসিলেন এবং স্বকৰ্ণে সমস্ত পণ শুনিয়া মাথায় হাত দিয়া বসিলেন। তাহার একান্ত দুর্ভাবনা হইল য়ে যদি জমিদার না! একে তো বহু টাকার ঋণে তাহার বসত-বাটী পর্যন্ত বন্ধক পড়িয়াছে, তাহার উপর অদ্য প্রাতেই যে দেড় সহস্র মুদ্রা হস্তগত করিয়া লইয়াং আসিয়াছেন, তাহারই বা কি হইবে? তিনি কাদ কঁাদ মুখে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তবে তো সর্বনাশের কথা, বাবু?” জমিদার মহাশয় ভাবী শ্বশুরকে ভরসা দিবার জন্য কহিলেন, “সর্বনাশের কথা? ওসব কি বলছেন আপনি? একটা চোর, দসু্য, ডাকাত চোখ রাঙাবে নীলরতন সরকারকে, আর নীলরতন সরকার ভয়ে অস্থির হয়ে একটা ছিচকে চোরের আদেশ পালন করবে ? আপনি আমাকে এতটা নীচু চোখে দেখেন নাকি?” ভাবী জামাতার বীরত্বব্যঞ্জক কথায় ভাবী শ্বশুরের মুখ কিছু পরিমাণে ভয়শূন্য হইল কহিলেন, “কিন্তু শুনেছি ঐ দসু্যটা না-কি এমনি অপরাজেয় যে, গভর্নমেন্টকে পর্যন্ত তোয়াক্কা করে না।”