পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা Σ. δ & উপস্থিত হইয়া আগন্তুক দ্বার ঠেলিয়া কক্ষ মধ্যে প্রবেশ করিল এবং নিঃশব্দে ভিতর হইতে দ্বার বন্ধ করিয়া দিল। পকেট হইতে টর্চ বাহির করিয়া জ্বালিয়া এবং গা হইতে কোট খুলিয়া ফেলিয়া একটি চেয়ারের উপর উপবেশন করিল। আগন্তুক অস্ফুট কণ্ঠে কহিল, “যাক, এবার নিশ্চিন্ত মনে কাজ সারা যাবে। আমি সময়ে সময়ে ভাবি, মানুষ এমন সহজ ও সরল পথে উপার্জন না কোরে কেন হাজার রকমের দুরূহ পথ বেছে নেয়। একটু দূরদৃষ্টি, একটু তীক্ষভাবে ভাববার শক্তি, ব্যাস! তারপর অফুরন্ত সময় হাতে, যেমন খুশি অতিবাহিত করো। এমন বিশ্রাম পূর্ণ ব্যবসা, এমন সুন্দর পথ, কত সহজে কার্য উদ্ধার হয়, তা’ না কোরে কেন যে বোকা মানুষগুলো দুঃখে জর্জরিত হয়, ভাবতেও পারি নে, বুঝতেও পারি নে।” আগন্তুক পকেট হইতে একটি ছোট প্ল্যান বাহির করিয়া ক্রোড়ের উপর মেলিয়া ধরিল। সে পুনরায় আপন মনে বলিতে লাগিল, “এখন ঘরের কোথায় কি আছে দেখা যাক। হা, যেখানে আমি বসে আছি, এটা হল-ঘর। বড়ো রাস্তার দিকে ড্রইংরুম, শয়নকক্ষ—আর খাবার ঘর,এই যে পূর্বদিকে। না, এখানে বসে সময় নষ্ট কোরে লাভ নেই।” আগন্তুক তাহার হাতের টর্চের আলো একবার চারিদিকে নিক্ষেপ করিয়া বিরক্ত স্বরে কহিল, “না, দেখছি বিলাত-ফেরত বিধবা জমিদারগৃহিণী নিতান্ত কৃপণের মত ঘর সাজিয়েছেন। ছোট-খাটাে দুএকটা দামী জিনিস যে এখানে ছড়ানো থাকবে, তা দেখছি কিছু নেই। চুলোয় যাক টুকরো জিনিস। এখন যে-কাজে এসেছি, তার দিকেই নজর দেওয়া ভালো। এখান থেকে হাত দশেক দূরে পূর্ব দিকে শয়নকক্ষের দ্বার।” আগন্তুক তাহার ক্রোড়ের প্ল্যানটিকে মুড়িয়া পকেটে রাখিল, তাহার পর টর্চ জ্বালাইয়া অগ্রসর হইতে লাগিল। একটি কক্ষের দ্বারদেশে আসিয়া কহিল, “এই যে দরজা। দরজা খল খুলতে আমার তিন মিনিটও লাগবে না। এখন দেখা যাক দ্বার কি বলে!” আগন্তুক দ্বারে একটু চাপ দিতেই সহসা দ্বার খুলিয়া গেল। “মোহন! তোমার অদৃষ্ট আজ অতি সুপ্রসন্ন। তুমি তোমার প্রিয়তমা নারীকে তোমার উপযুক্ত লক্ষ মুদ্রা মূল্যের হীরার কঠি দিয়ে সাজাবার বাসনা পূর্ণ করতে পারবে। তোমার পথে ভগবান আজ সর্ব সুযোগ স্বেচ্ছায় দিয়ে রেখেছেন। তা ছাড়া তুমি-জানো, এই কক্ষের কোথায় কি সাজানো আছে। এমন কী, আলপিনটি পর্যন্ত কোথায় রাখা আছে, তাও তোমার প্ল্যানে আঁকা আছে। আজকার রাত্রি তোমার শুভরাত্রি। এর বেশি তুমি আর কি চাও, মোহন! তোমার বাসনা আজ বিনা বাধায় পূর্ণ হবে। তোমাকে শুধু অতি নিঃশব্দে কাজ করতে হবে। যেন কোনমতেই ধনী বৃদ্ধা মহিলার নিদ্রা ভঙ্গ না হয়।” ইহার পর মোহন শয়ন-কক্ষের হল-সংলগ্ন গুপ্ত কক্ষের দ্বার, যেখানে জমিদারগৃহিনী নিদ্রা যাইতেছে, এমন সাবধানতার সহিত মুক্ত করিল যে, অধিকারিণী যদি নিদ্রিত না হইয়া বিছানার উপর জাগরিতও থাকিতেন, তাহা হইলেও কোন সন্দেহ তাহার মনে জাগিত না। এমন নিঃশব্দে বিখ্যাত দস্য মোহন তাহার কার্য সম্পন্ন করিল। মোহন ভাবিল, প্ল্যান অনুযায়ী তাহাকে শুধু খাটের অদূরে রক্ষিত বৃহৎ সোফার পশ্চাতে যে ছোট টেবিলটি আছে, তাহার নিকট যাইতে হইবে এবং টেবিলের উপরের টানার মধ্যে নানাবিধ টুকরা দ্রব্যের মধ্যে বহুমূল্য বিখ্যাত হীরার কঠি লুক্কায়িত আছে।