পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন &> নীলরতন সরকার সহসা যৌবন-সুলভ অট্টহাস্য হাসিতে গিয়া, বাতে আক্রান্ত কোমরে তীব্র ব্যথা অনুভব করিলেন এবং বিরক্তিজনক মুখে কহিলেন, “গভর্নমেন্টকে তোয়াক্কা করে না একটা চোর—এমন কথা আপনার মত বিজ্ঞ ব্যক্তির মুখে শোভা পায় না! আর অপরাজেয়! যে প্রাণভয়ে ইদুরের মত গর্তে লুকিয়ে বসে থাকে, তাকেই বা আপনি বয়স্ক ব্যক্তি হ’য়ে অপরাজেয় বলেন কি কোরে?” আশুতোষবাবু দেখিলেন, তাহার ভাবী জামাতা-বাবাজীবন যে কোন কারণের জন্যই হৌক, দসু মোহনের প্রাপ্য রাগটুকু ভাবী শ্বশুরের উপর বর্ষণ করিতেছেন। কিন্তু তিনিও কাচা ছেলে নন। কহিলেন, “যাক নিশ্চিন্ত হলাম। শুনে তো ভয়ে আর বাচিনে কি জানেন, আমরা হলাম গিয়ে সেকেলে লোক, একটুতে বেশি মনে করি। কিন্তু আপনার দৃষ্টিধারার গতিই পৃথক। সুতরাং একই বস্তুকে আমরা বিপরীত দৃষ্টিতে দেখি। যাক কোন ভয় না থাকলেই হ'ল। আমি ভাবতে ভাবতে আসছিলাম যে আমার মনই যদি এমন উতলা হয়, তবে সে কচি মেয়ে, সে যে কী ভীষণ ব্যথা পাবে, তা’...” বাধা দিয়া উদ্বিগ্ন কষ্ঠে জমিদার মহাশয় কহিলেন, “তিনি কিছু শুনেছেন নাকি ?” “তিনি?” আশুতোষবাবু কৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করিয়া কহিলেন, “ও বুঝেছি। মাধুরীর কথা বলছেন? সে কি আর না শুনেছে? আমি যাই, গিয়ে খবর নিই, দেখি কতদূর কি শুনে না জানি কি করছে?” নীলরতনবাবু কহিলেন, আর কিছু নুতন সংবাদ আছে?” “ক্ষেপেছেন বাবাজী ? কোন ব্যাটা-বেটির আর সাধ্য আছে আপনার বিরুদ্ধে নতুন করে কোন কথা বলবে? এই যে বিজনবাবু আসছেন।” প্রাইভেট সেক্রেটারী প্রবেশ করিয়া কহিল, “আমার একটু গোপনীয় কথা ছিল।” বলিয়া আশুতোষবাবুর দিকে একবার চাহিল। নীলরতনবাবু কহিলেন, “উনি আমাদের বিশেষ হিতৈষী। তুমি বলতে পারো।” আশুতোষবাবু শশব্যস্তে বলিলেন, “না না, আমি এখন যাই। আমি গরীব লোক, আপনাদের রাজ-রাজড়ার গোপন কথায় থাকবার যোগ্যতা কোথায়?” তিনি উঠিয়া দাঁড়াইলেন ও ধীরে ধীরে খাসকামরা হইতে বহির হইয়া গেলেন। $3 জমিদার কহিলেন, “কি সংবাদ আছে?” ഷ് বিজন রায় কহিল, “কলেজের ছেলেরা এই পত্রের কথা জানতে পেরে একটা সভা কোরে দসু মোহনের এই পত্র আসার জন্য ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কোরে প্রস্তাব পাশ করেছে। পরে সারা গ্রাম প্রোশেসান কোরে প্রদক্ষিণ করবার সময় সকলের কানে এই সব কথা তুলে দিয়েছে।” জমিদার নীলরতন ক্রোধে ফাটিয়া পড়িয়া কহিলেন, “এই পত্রের কথা কে তাদের বললে? তারা জানলে কোন সূত্রে? মাত্র তিনজন আমরা জানতাম। পুলিস-সাহেব, তুমি আর আমি। আমি যে বলিনি, তাতো বিশ্বাস করো ?” বিজন রায় মলিন মুখে কহিল, “হ্যা, বাবু।” “আর পুলিসও বলেনি। তাদের সে স্বভাবও নয়। বাকি থাক তুমি।” জমিদার নীরব হইলেন।