পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা Հ Զ ծ বিশ কোটিতে দাঁড়াবে। হা, তাছাড়া একটা মকদ্দমার জন্য ইনজাংশনও জারি হয়েছে। ঐ যে অফিস ঘরে বড় সিন্দুকটা দেখলেন, ওর মধ্যেই সব শেয়ার রাখা আছে।’ আমার মাথার ভিতরটা বো কোরে ঘুরে উঠল। একদিকে কোটি টাকার শেয়ার, যুদ্ধ লাগলে বিশ কোটিতে দাঁড়াবে—আর অন্য দিকে দশ লক্ষ টাকার উইল, মাত্র ছমাস পরে সব বাধা কেটে যাবে। আমি মনে মনে বললুম, ‘মোহন! শান্ত হও, অস্থির হয়ো না! এতদিন পরে তুমি একটা শিকারের মত শিকার পেয়েছ। অফিস ঘরের বড় সিন্দুকের মধ্যে—আঃ!” আমার মনে হ’ল, শেয়ারগুলো আমার পকেটের মধ্যেই আছে। আমার সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে বলে ফেললুম, ও, ওই সিন্দুকেই তা হলে আছে? লেডী ভৌমিক বললেন, "হাঁ, ঐ সিন্দুকেই সব আছে। এরূপ আত্মীয়তা অতি শীঘ্রই ঘনিষ্ঠতায় পরিণত হ’ল। লেডী ভৌমিকের বার বার পীড়াপীড়িতে আমি সলজ্জকণ্ঠে আমার দারিদ্র্যের ইতিহাস বর্ণনা করলুম;আমি যে কর্মহীন বেকার মাত্র, যে কোন একটি চাকরি পেলে কৃতাৰ্থ হয়ে যাই, একথা বলতেও ভুললাম না। আমার অদৃষ্ট সেদিন সুপ্রসন্ন ছিল। লেভী ভৌমিক নির্বাক-স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে বললেন, “ডিয়ার, তোমার একজন সেক্রেটারী দরকরা—না? তোমার জীবনদাতাকে যদি কিছুমাত্র কাজে লাগাতে পারো, তা হলে ওঁকে আজই কাজে ভর্তি করে নাও। অফিসের ওপরের ঘরখানা খালি আছে। উনি সেখানেই থাকবেন খন!’ চাকরি পেলুম। কোয়ার্টার পেলুম। ভাবলুম, মোহন যে কাজে হাত দেয়, তাই সফল না হয়ে পারে না। সে এই পৃথিবীতে যখন এসেছে, তা পৃথিবীরই ভাগ্য সুপ্রসন্ন বোলে! তবে সেই মোহনের ইচ্ছার কি ব্যতিক্রম ঘটতে পারে? পরদিন নুতন কাজে লেগে গেলুম, নূতন কোয়ার্টারে বাস করতে আরম্ভ করলুম। : না তার ধারা। দুই মাস কেটে গেল, আমাকে মাত্র চারখানা অনাবশ্যক পত্র লিখতে হয়েছিল। মাত্র একবার অফিস-ঘরে মনিব ডেকে পাঠিয়েছিলেন, দু’মাসের মধ্যে এবং সেই সুযোগের মধ্যে আমি আমার দিন-রাত্রির স্বপ্ন সেই লৌহ-সিন্দুকটি কয়েক মুহুর্তের জন্য দেখতে পেয়েছিলাম। ஆவி কিন্তু আমি অধৈর্যও হইনি, অভিযোগও করিনি। কারণ এখন আমার নিরবিচ্ছিন্ন প্রাসাদে সেই পবিত্র রাত্রে তার মুখের সেই উদ্বেগ ও শঙ্কার ভাবটি বার বার মানস-নেত্রে টেনে এনে দেখবার জন্য আমার এখন অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। সুতরাং কখনও শয়ন কোরে, কখনও গান গেয়ে, কখনও বা ভাবতে ভাবতে দিন রাত্রি কোথা দিয়ে যে চলে যেতে লাগল, তার হিসাব নেই। যে সিন্দুকের ভিতর কোটি টাকার সম্পদ রক্ষিত আছে, একবার দেখেই বুঝেছিলুম, সে সিন্দুক সহজে ভাঙা দসু মোহনের সাধ্য নয়। তা’ হ’লও যেখানে শক্তি বিফল হয়, সেখানে মোহনের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির নিকট কিছুই দাঁড়াতে পারে না। মোহন (১ম)-১৪