পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা Հ > ծ রয়েছি, আমার নামটা পর্যন্ত চাকর-দারোয়ানেরা জানে না। আমি সেক্রেটারী হ’লেও তারা আমাকে এমন সম্মান করতো যে তাদের মনিব স্যার ভৌমিককেও অমন সম্মানের দৃষ্টিতে দেখত কিনা আমার সন্দেহ হ’ল। কারণ যে কি, আমি ভেবে পেলাম না;চাকর, দারোয়ান আমাকে দেখলেই মিলিটারী সেলাম দিয়ে সন্ত্রমের ভারে নত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। প্রাইভেট সেক্রেটারীকে এতটা সম্মান দেখানো—আমার যেন কেমন বিস্ময় বোধ হতো। একদিন আমি নীচে নেমে অফিস-ঘরের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছি, এমন সময়ে স্যার লাজুক। কারও সঙ্গে আলাপ করতে বড় ভয় পান।” কিন্তু আমাকে বললেন, কি অন্য লোকের কথা বললেন, বিশেষ বোঝাবার চেষ্টা পর্যন্ত করবার আমার তখন সময় ছিল না। রাত্ৰি হ’ল। আমি প্রতিজ্ঞা করলুম, হয় আজকার রাত্রিতেই কাজ শেষ করবো, নয় আর কখনও হবে না। রাত্রি দশটা বাজল। এগারোটা—বারোটা বাজল। তখন ছিদ্র দিয়ে দেখি, স্যার ও লেডী ভৌমিক উভয়েই সিন্দুক খুলে কাগজ-পত্র দেখতে ব্যস্ত রয়েছেন। পরে ১টা বাজতেই লেভী ভৌমিক বললেন, “আর পারি না, অনেক রাত হয়েছে, এস, শুইগে।” স্যার বললেন, “তুমি যাও। আমি একটু পরেই যাচ্ছি।” লেডী চলে গেলেন। চেয়ে দেখি, স্যার ভৌমিক অনন্যমনা হয়ে কাগজ-পত্রের মধ্যে ডুবে গেছেন। আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠলুম—আর দেরি করা নয়। কিছুই দৃষ্টিপথে পড়ে না। আমি একটি দড়ির প্রান্তভাগ জানালার সঙ্গে বাঁধলুম; পরে সেই দড়ি বেয়ে নিঃশব্দে, পর্দা সরিয়ে দেখলুম যে স্যার ভৌমিক তেমনি অনন্যমনা হয়ে কাগজ-পত্ৰ দেখছেন। আমি অতি নিঃশব্দে জানালার খড়খড়ি দেওয়া একটা পাল্লা বাইরেরদিকে খুলে ফেললুম এবং ধীরে ধীরে জানালার ভিতরে পর্দার পিছনে দাঁড়াতেই জানালার ভিতর দিয়ে শীতের হাওয়া প্রবেশ কোরে স্যার ভৌমিককে সজাগ কোরে দিলে। তিনি জানালা বন্ধ করবার জন্য পর্দার কাছে যেমন এসেছেন, আমি পর্দা সমেত তাকে জড়িয়ে ধোরে কাবু কোরে ফেললুম;তিনি সশব্দে মেঝের ওপর পোড়ে জ্ঞান হারালেন। এমন সহজে কাজ হ’ল যে, তিনি তার আক্রমণকারীকে দেখতে পর্যন্ত পেলেন না। আমি সানন্দে মুক্ত সিন্দুকের নিকট গিয়ে ভিতর থেকে এক তাড়া ফাইল বার কোরে বগলে নিয়ে দ্বার দিয়ে বার হয়ে বরাবর বাড়ীর পিছনে গিয়ে খিড়কি-দ্বার খুলে রাস্তায় উপস্থিত হলুম। সেখানে মোটর নিয়ে আমার এক সহকারী অপেক্ষা করছিল। তার হাতে পরে দুজনে মিলে বার দুই আনা-গোনা কোরে সিন্দুকের ভিতর যা কিছু ছিল অর্থাৎ যত শেয়ার সিকিউরিটি ছিল, বারে কোরে এনে মোটর বোঝাই কোরে ছেড়ে দিলুম।