পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀՖ 8 মোহন অমনিবাস । (ن) মুসলমান রাজত্বের আমলে বহু তীক্ষ্ণ ধী বাঙালী সম্রাটের দরবারে উচ্চাসনে অধিরূঢ় ছিলেন। সেই সময় হইতেই তাহার বাঙলা দেশ ত্যাগ করিয়া ভারতের নানা স্থানে ঘরবাড়ী নির্মাণ করিয়া সেই সব দেশের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হইয়া যাইলেও তাহারা জাতীর সত্ত্বা বজায় রাখিয়াছেন। তাহারা কেহ বা বিখ্যাত জমিদার, কেহ বা বিখ্যাত ধনী বলিয়াও বর্তমান সময়ে খ্যাত হইয়াছেন। এমনি এক পরিবারের কন্যা আমাদের কুমারী রমা সোম। রমাদের বর্তমান বাসস্থান আগরায়। রমার পিতা রেঙ্গুনের বিখ্যাত ধনী ব্যবসায়ী। রমা শিক্ষিতা সুন্দরী তরুণী। কয়েক মাস পূর্বে সুপ্রসিদ্ধ দসু মোহনের অন্য পরিচয়ের সহিত পরিচিত হইয়াছিল। রমার মন মোহনের অপূর্ব কান্তি, মাধুর্যভরা ব্যবহার, উচ্চশিক্ষা, সৎ প্রবৃত্তিতে মুগ্ধ হইয়াছিল। পরে রমার সহিত মোহনের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ মাতুল কুমার নরনারায়ণের প্রাসাদে। রমা মোহনকে অনুরোধ করিয়াছিল, তাহার মাতুলের ঐতিহাসিক হীরক-বলয় প্রত্যপণ করিবার জন্য, মোহন তাহার অনুরোধ পালন করিয়াছে। রমা গর্বে, আনন্দে পূর্ণ হইয়াছিল। রমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার বিবাহ উপলক্ষে রমার মাতা ভ্রাতা ও পিতা রেঙ্গুন হইতে আগরার প্রাসাদ-বাটীতে আগমন করিয়াছেন। বিবাহ হইয়া গিয়াছে। . রমার পিতা মিঃ সোম ঐ প্রাসাদে মুসলমান সম্রাটের জায়গির স্বরূপ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। কিংবদন্তী প্রচলিত আছে যে, এক সময়ে এক সম্রাটের প্রধান মন্ত্রী বাস করিবার জন্য ইহা নির্মাণ করিয়াছিলেন এবং সে সময়ের প্রথানুযায়ী প্রাসাদের অভ্যন্তর দিয়া এক দীর্ঘ সুড়ঙ্গ-পথ প্রস্তুত করিয়াছিলেন। সেই সুড়ঙ্গ দিয়া সকলের অগোচরে প্রাসাদ হইতে বাহির হইয়া যাওয়া চলে। যুদ্ধের সময় এই পথ বিশেষ কাজে লাগিত। শত্ৰু-হস্তে পরাজিত হইলে পরিবারবর্গকে লইয়া, শক্র প্রাসাদ অবরোধ করিয়া থাকিলেও অনায়াসে পলায়ন করা সম্ভব হইত। কিন্তু কালক্রমে সুড়ঙ্গপথ অদৃশ্য হইয়া গিয়াছে। সুড়ঙ্গের প্রবেশ দ্বার কোথায় ও কিরূপে তাহা মুক্ত করিতে পারা যায়, বহু মতে অনুসন্ধান ও গবেষণা করিয়াও কেহ তাহা আবিষ্কার করিতে পারেন নাই। ~. সোমবংশের হস্তলিখিত বিস্তারিত ইতিহাসে এই সুড়ঙ্গের কথা উল্লিখিত আছে এবং গতবার যখন রমা মোহনের সহিত জাহাজে বন্ধুত্ব করিয়াছিল, তখন সে অন্যান্য গল্পের সহিত তাহাদের ঐতিহাসিক প্রাসাদ সম্বন্ধেও নানাকথা বলিয়াছিল। তাহার কথা শুনিয়া ছদ্মবেশী মোহন বলিয়াছিল, যদি সুযোগ ঘটে, তাহা হইলে সে একবার ঐ সাঙ্কেতিক অক্ষর সমাধানের চেষ্টা করিবে। আরও কথিত আছে যে, অতীতে যে শেষ মহারাজা এই প্রাসাদে বাস করিয়াছেন, তাহার সমস্ত সম্পদ, অর্থ, হীরা-মুক্ত সর্বস্ব এই সুড়ঙ্গের মধ্যে একটি ছোট্ট কক্ষে আবদ্ধ করিয়া যুদ্ধে পরাজিত হইবার পর পলায়ন করিয়াছিলেন, আর ফিরিয়া আসেন নাই। কিন্তু এই সকল প্রবাদ প্রচলিত থাকা সত্ত্বেও বর্তমান উত্তরাধিকারী মিঃ সোম পূর্বতন অধিকারীদের মতই সকল প্রচেষ্টা করিয়াও বিফল হইয়াছেন এবং এই ভাবিয়া মনকে প্রবোধ দিয়াছেন যে, ইহা কখনও সত্য হইতে পারে