পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা ২১৭ সরোজ বিস্মিত হইয়া কহিল, “মাথায়? যদিই থাকে, তবে চুলের ভিতর কাটা দাগ জানাবার সুযোগ কিসে হয়, বলতে পারিস ? কিন্তু এ প্রশ্ন কেন, রমা ?” রমা কৈফিয়ত এড়াইবার জন্য কহিল, “এমনি জিজ্ঞাসা করছি।” রমার মনে যে ঝড় বহিয়াছিল, তাহা একমাত্র তাহার অন্তর্যামীই জানিতেন। জানি না, কি কারণে তাহার মনে দৃঢ় ধারণা জন্মিয়াছিল যে অগ্রজের বন্ধু কর্ণ-সম দাতা ব্যক্তি উৎপল বাবু আর অন্য কেউ নহেন—দসু্য মোহন ছাড়া। রমার মনে বার বার এই প্রশ্ন উদয় হইতেছিল, যদি সত্যিই তাহার সন্দেহ সত্য হয়, উৎপল যদি মোহনেই পর্যবসিত হয়, তবে সে কী করিবে? প্রথমতঃ তিনি আসিতেছেন তাহার ভ্রাতার বন্ধু হিসেবে, মাননীয় ধনী অতিথি হিসেবে তাহাদেরই বাড়িতে। এক সময়ে তাহাকে তাহার সত্য পরিচয় না জানিয়া তাহদের প্রাসাদে সে-ই আমন্ত্রণ করিয়াছিল। সেই আমন্ত্রণের পর গতবারে যখন মাতুলালয়ে তাহার সহিত সাক্ষাৎ হইল, অন্যান্য অনেক কথা হইয়াছিল, কিন্তু সে সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করিয়া লয় নাই। তবে রমা কী করিবে? রমার মনে পড়িল, গতবার মাতুলালয়ে যে যখন মোহনের আশু বিপদ দেখিয়া স্বেচ্ছায় তাহার হাত ধরিয়া খিড়কির গোপন পথে তাহাকে বাহির করিয়া দিয়াছিল, তখন মোহন বলিয়াছিলেন, তিনি পুনরায় আমার সহিত সাক্ষাৎ করিবেন এবং চিরদিনের মত একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন। কিসের সিদ্ধান্ত, তাহা রমা বহুবার বহু রকমে চিন্তা করিয়াও ধারণা করিতে পারে নাই, বুঝিতে পারে নাই। কিন্তু সত্যই কী তিনি আসিতেছেন? এমন তো হইতে পারে, সত্যই উৎপলবাবু ভিন্ন ব্যক্তি। রমার মুখ অন্ধকার হইয়া উঠিল। মানুষের মন এমনই রহস্য-ভরা যে, সে যাহা প্রকাশ্যে এড়াইতে চাহে, তাহাই তাহার মনের গোপন দেশে আবাহন-গীতিতে মুখরিত হইতে থাকে। “যদি না আসেন, তবে রমার স্টেশনে আসিবার প্রয়োজন কি ছিল?” রমা নিজেকে প্রশ্ন করিল। পুনরায় কহিল, “যদি আসেন, তবে রমা কি তাহাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা করিয়া লইতে পরিবে? তাহা কি উচিত হইবে? তাহা কি নিয়মের ব্যতিক্রম করবে না? রমা এমন কথাও চিন্তা করিতে পারে? ছিঃ !” * রমার মুখ আরক্ত হইয়া উঠিল। সে আপনাকে পুনরায় প্রশ্ন করিল, “তবে রমা গত একটি বৎসর ধরিয়া সেই কয়টি দিনের কাহিনী ভুলিতে পারিলসা কেন? যতবারই ভুলিব বলিয়া ভাবিয়াছে, দসুকে তাহার প্রাপ্য ঘৃণা দিয়ে জর্জরিত করব ভাবিয়াছে, ততবারই সে কেন তবে পরাজিত হইয়াছে? দসু্যু! মোহন দস্যু? দসু মোহন।” রমা অস্ফুট কণ্ঠে উচ্চারণ করিল। - রমা অগ্রজের নিকটে যাইয়া কহিল, “আমি বাড়ী যাবো, দাদা।” সরোজ ভূ-কুঞ্চিত করিয়া ভগ্নীর মুখের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়া কহিল, “তার মানে?” রমা আরক্ত হইয়া ভাবিল, সত্যই তাহার মানে তো কিছুই নাই! কহিল, “আর কত দেরি, দাদা ?” সরোজ হাতের রিস্টওয়াচটার দিকে চাহিয়া কহিল, “পাচ মিনিট।”